নাটোরের ধর্মপল্লীতে দেখার আছে অনেক কিছু
- রনি আহমেদ
জীবনানন্দ দাসকে দুদণ্ড শান্তি দেওয়া নাটোর জেলার সব জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় জায়গা। জায়গাগুলো ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণা করে দাঁড়িয়ে আছে, যা পর্যটকদের চোখের তৃষ্ণাকে করে পরিপূর্ণ। তার মধ্যে অন্যতম নাটোরের লুর্দের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লী।
লুর্দের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লী যারা পরিচালনা করে থাকেন সেই সব পণ্ডিত ব্যক্তিদের খ্রিষ্টমণ্ডলী নামে ডাকা হয়। এই ধর্মপল্লী পরিচালনার আসল কেন্দ্রস্থল অবস্থিত রোমে। স্থানীয়ভাবে যেসব মানুষ খ্রিষ্টধর্মে নিজেদের বিশ্বাস রাখেন মূলত তাদের সঠিকভাবে দেখাশোনা করা এবং আত্নিক দিক দিয়ে যত্ন করার উদ্দেশ্য নিয়েই নিদিষ্ট একটা কার্যস্থান এলাকাকে ধর্মপল্লী নামে ডাকা হয়।
নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার ৫টি এবং এক নম্বর জোয়াড়ি ইউনিয়নের ২টি ও পাঁচ নম্বর মাঝগ্রাম ইউনিয়নের ২টিসহ মোট সাতটি গ্রাম নিয়ে এই ধর্মপল্লী প্রতিষ্ঠিত। এই এলাকায় সর্বপ্রথম ১৯৪০ সালে স্বর্গীয় ফাদার থমাস কাত্তানের (পিমে) নামে একজন ইতালীয়ান ধর্মযাজক আসেন। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে নাটোর জেলার বনপাড়া উপজেলায় গির্জাটি নির্মিত হয়।
যা কিছু দেখতে পাবেন
এই ধর্মপল্লীর সমস্ত এলাকা যেন মনোরম পরিবেশে ভরপুর। এখানে প্রবেশ করতেই সর্বপ্রথম চোখের নজড় গিয়ে পড়বে চিৎপ্রকর্ষ গির্জাতে এবং মা মারিয়ার চমকপ্রদ মূর্তিতে। তার সাথে বিভিন্ন ধরনের ফুলের সমন্বয়ে গঠিত ফুলের বাগান যে কাউকেই মুগ্ধ করে নেবে।
এই ধর্মপল্লীর অধীনে একটি হাই স্কুল (সেন্ট যোসেফস্ উচ্চ বিদ্যালয়) ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সেন্ট যোসেফস্ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সেন্ট জেভিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়) পরিচালিত হয়ে আসছে। এছাড়াও এখানে প্রায় ৪৫০ দরিদ্র আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে আলাদা আলাদা করে ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার কথা বিবেচনা করে একটা সেলাই কেন্দ্র এখানে স্থাপিত করা হয়েছ। প্রসূতি মাদের নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য ১৯৬০ এর দশকে দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। যার মাধ্যমে এই ধর্মপল্লীর প্রসূতি মায়েরা স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন।
এই ধর্মপল্লীর পরিচালকদের সদিচ্ছায় প্রাণপণে চেষ্টার ফলে মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে এখানে অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট ও রাস্তাঘাট নির্মিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই অঞ্চলের মানুষের শিক্ষাক্ষেত্রে, অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে এবং সামাজিক ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই ধর্মপল্লী সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখে চলেছে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার কল্যাণপুর হতে নাটোরের বাসে উঠেতে হবে। নাটোর সদর পাবার আগে বনপাড়াতে এসে নামতে হবে। কিংবা নাটোর সদর থেকে বনপাড়া আসার যে যেকোনো বাসে উঠতে হবে। বনপাড়ায় নামলেও সেখান থেকে রিকশা, ভ্যানগাড়ি ও অটোরিকশাতে করে যাওয়া যাবে লুর্দের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লীতে।