কিশোরগঞ্জের বিস্ময় – ‘অল ওয়েদার’ সড়ক!
- সাজেদুল হেকিম জিহাদ
হাওড়ের জন্য বিখ্যাত কিশোরগঞ্জ। কিছুদিন পূর্বেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন এই রাস্তাটি। দুইপাশে পানি মাঝখান দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। দেখলে মনে হয় আকাশ আর পানিতে মিলিয়ে গেছে পথটি।
দু’চোখ দিয়ে যতদূর দেখা যায়, পুরোটাই অথৈ পানি আর উথাল-পাথাল ঢেউয়ের অবিরত ছুটে চলা। দূর থেকে গ্রামগুলোকে দেখে মনে হয় যেনো একেকটা ভেসে থাকা দ্বীপ।
হাওড়ের বিস্ময় খ্যাত এই রাস্তাটিতে এখন সারাবছরই যানবাহন চলাচল করে। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন আকাশ এবং পানি কে যুক্ত করেছে পথটি। মূলত আকাশ এবং পানিকে যুক্ত না করলেও, যুক্ত করেছে কিশোরগঞ্জের তিনটি বিচ্ছিন্ন উপজেলা – ইটনা, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রামকে।
এই রাস্তার দু’পাশের উত্তাল ঢেউ এবং এলোমেলো বাতাসে কিছুটা পথ পেরোলেই মিলবে নৈসর্গিক তৃপ্তি। কিশোরগঞ্জের ১৩ টি উপজেলায় ৯৭ টি হাওড় রয়েছে। বর্ষায় কিশোরগঞ্জের এই হাওড় রুপ নেয় সুবিশাল সমুদ্রের মত।
একসময় বর্ষাকাল এলে, এখানকার জনপদ গুলো হয়ে যেতো বিচ্ছিন্ন। সেই সময়টতে যোগাযোগের জন্য নৌযানই ছিলো একমাত্র মাধ্যম। এই নিয়ে এখানকার স্থানীয়দের কাছে প্রচলিত একটি প্রবাদ হল – “শুকানায় নাউ আর বর্ষায় পাও ” অর্থাৎ শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলাচল করা ছাড়া উপায় ছিলো না এবং বর্ষাকালে এলে নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হত। বর্তমানে এই প্রবাদটি বদলে যাওয়ার পথে। কারন হাওড়বাসী এখন ১২ মাসেই সংযুক্ত থাকবে সড়কপথে।
৪৭ কিলোমিটার উঁচু সড়ক এবং ৩৫ কিলোমিটার সাব মার্সিবল রাস্তাটি যুক্ত করেছে ইটনা, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রামকে। পাশাপাশি পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে সারা বছর ব্যবহার উপযোগী এই সড়কটিতে রয়েছে অন্তত ৭৬টি সেতু ও বক্সকালভার্ট।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের উদ্যোগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তৈরী করেছে সবচেয়ে নান্দনিক এই গ্রামীণ সড়কটি। স্থানীয় একজন বলেন, ‘স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে এখন, কখনও কল্পনাতেও ভাবিনি এমন রাস্তা হবে’। এইরকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতায়াতের সুবিধা পেয়ে এখন নতুন স্বপ্নে বিভোর হাওড়বাসী।
এই রাস্তায় ভ্রমন করতে গেলে, মূলত দুই রকমের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে এক রকম আর শুষ্ক মৌসুমে আসলে দেখা যায় – দিগন্ত বিস্তৃত হাওরের মাঝখান দিয়ে পিচঢালা প্রশস্ত উঁচু রাস্তা। দুই পাশে সবুজের সমারোহ। সড়কে সাঁই-সাঁই করে চলছে ছোট-বড় যানবাহন। দূর থেকে মনে হবে যেন পাকা রাস্তা মিশে গেছে দূর নীল দিগন্তে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কিশোরগঞ্জের হাওর বর্ষার মতো গ্রীষ্মেও উজাড় করে দেয় রূপের ছটা। আর বর্তমানে হাওড়ের সৌন্দর্য যেনো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে অল-ওয়েদার সড়কটি।
গ্রীষ্মেও ভাটির টানে এখানে ছুটে আসেন সৌন্দর্য পিপাসুরা। স্বপ্নের সড়কে ছুটে চলেন হাজার হাজার মানুষ। ছোট-বড় যানবাহনে করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। রাস্তার পাশের চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন অনেকে। সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে ধরে রাখতে ব্যস্ত অনেকেই। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও আসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিদেখার জন্য। করোনায় বছর খানেক ধরে ঘরবন্দি থাকলেও ঈদ উৎসবে হাওড়ের নির্মল বাতাসে সামান্য স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে প্রতিনিয়ত অনেকেই ছুটে আসেন এখানে।
কিশোরগঞ্জ ৪ আসনের – সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক বলেন, “আমার পূর্বপুরুষেরা কখনও ভাবেনি, এখানে গাড়ি চলবে। এখানকার পর্যটন নিয়ে কিছু করা হলে, ভবিষ্যৎ এ মানুষ কক্সবাজার না গিয়ে এখানে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।” স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, “এই সড়কটির হওয়ার ফলে পর্যটনের জন্য নতুন সম্ভাবনার দোয়ার খুলে দিয়েছে।” বর্তমান হাওড়বাসীর কাছে সড়কটি পরিচিতি পেয়েছে ‘হাওড়ের বিস্ময়’ কিংবা ‘স্বপ্নের সড়ক’ নামে।