বাংলাদেশেও সেই প্রেমের সমাধি!
- দিবাকার চৌধুরী
পৃথিবীর বুকে খাটি প্রেম শাশ্বত। হাজারো প্রেমিক যুগল তাদের ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে গড়ে গেছেন নানা ধরণের স্মৃতিস্তম্ভ। কেউ তাজমহল বানিয়ে আবার কেউ নিজের সর্বোচ্চটা উৎসর্গ করে। আর ভালোবাসার বিনিময় হিসেবে তৈরি করা তাজমহল স্থান করে নিয়েছিল সাত আশ্চর্যের একটি হিসেবে। ধনীরা চাইলেই অল্প টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করে আসতে পারলেও নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রেমের তাজমহল শুধু কল্পনাতেই দেখা যায়।
কিন্তু অনেকেই জানে না বাংলাদেশেও রয়েছে প্রেমের সমাধি, তাজমহল। রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ১০ মাইল পূর্বে সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত আগ্রার তাজমহলের হুবহু প্রতিরূপ। ধনবান চলচ্চিত্র নির্মাতা আহসানুল্লাহ মনি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এই প্রতিরুপ তাজমহল তৈরি করেন।
নিম্ন আয়ের মানুষদের ভালোবাসার সমাধি দেখানোর জন্যই মূলত ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করে তাজমহলটি। তবে খুব স্বাভাবিক মনে হলেও সহজ হয়নি নির্মাণ কাজ। ভারতের দূতাবাস প্রকৃত তাজমহলের মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করার ফলে অভিযুক্ত করলেও তা উপেক্ষিত করে নির্মাণ করেন বাংলার তাজমহল। মূলত ১৯৮০ সালে ভারতের আগ্রায় সত্যিকারের তাজমহল পরিদর্শন শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয় মনি। উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত ও নিম্ন –মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী, যাদের ভারতে গিয়ে তাজমহল দেখার মতো সুযোগ নেই, তাদেরকে সাধ্যের মধ্যে সেই প্রত্যাশা পূরণ করা।
তাজমহলটি কেন নির্মাণ করেছিলেন সে বিষয়ে তিনি জানান, “এ দেশের দরিদ্র মানুষ যারা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সামর্থ্য না থাকায় ভারতে গিয়ে তাজমহল দেখতে পারেন না, তাদের স্বপ্ন পূরণ করতেই বাংলার এই তাজমহলটি নির্মাণ করা হয়েছে”।
প্রতিরুপ তাজমহলটিতে ভারতের মতোই একই মার্বেল এবং পাথর ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। তবে, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির ফলে খুব অল্প সময়ে সম্পন্ন হয়েছে তাজমহলটির কাজ। আধুনিকতার ছোঁয়া না থাকলে শ্রমিকদের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে ২০ বছর এবং ২২,০০০ শ্রমিক লাগত।
বর্তমান সময়ে ভালোবাসার মর্যাদা আগের মতো গভীর না হলেও বর্তমানের প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভালোবাসাকে এবং ছুটির সময় কাটাতে সোনারগাঁওয়ের এ স্থানটিতে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
মহলের ভেতরেই আছে একটি রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিও। এখানে সিনেমা ও নাটকের শুটিং করা হয়। রয়েছে ২৫০ আসন বিশিষ্ট সিনেমা হল ও সেমিনার কক্ষ। আর তাজমহলের বাইরেও আছে রেস্তোরা, খাবারের ছোট-বড় দোকান, আবাসিক হোটেল, হস্তশিল্পের দোকান এবং জামদানি শাড়ির দোকান।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে কুমিল্লা-গামী যেকোনো গাড়িতে চড়ে মদনপুর বাস-স্ট্যান্ডে যেতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি বা স্কুটারে জনপ্রতি ২৫-৩০ টাকায় যাওয়া যায় তাজমহলে। প্রতিদিন সকাল ১০-৬টা পর্যন্ত খেলা থাকে বাংলার তাজমহল। সেখানে প্রবেশ ফি ১৫০ টাকা।