না বলা কথার উৎসবে আমন্ত্রণ
মো. সাইফ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে না বলা কথার উৎসবে। হ্যাঁ, আগামী ১৩ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘জাতীয় মূকাভিনয় উৎসব ২০১৬’। চলবে তিনদিন ধরে। মুল আয়োজন টিএসসিতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে থাকবে স্ট্রিট-শো সহ অন্যান্য কর্মসূচি। মূকাভিনয় চর্চার সাথে জড়িত দেশের ১৫টি দল এই উৎসবে অংশগ্রহণ করবে। উৎসবটির আয়োজন করেছে ঢাকা ‘ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন’ নামের সংগঠন।
আয়োজকদের কাছ থেকে জানা যায়, ‘না বলা কথাগুলো না বলেই হোক বলা’ শিরোনামে ২০১১ সালে আত্মপ্রকাশ করা ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন। সংগঠনটি গঠন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে মূকাভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করা মীর লোকমান।
মীর লোকমান বলেন, ‘আমরা আশা করছি মূকাভিনয় উৎসব এবং মূকাভিনয় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রাচীন এই শিল্প চর্চার মাধ্যমটি আরো জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।’
মূকাভিনয় একটি প্রাচীন শিল্প মাধ্যম। ধারনা করা হয় সেই রোমান যুগ হতেই মূকাভিনয় চর্চা হয়ে থাকে। মূলত, মুখে কোনো সংলাপের ব্যবহার না করেই শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেই এখানে মনের ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়। ‘Pantomime’ নামে এক মুখোশ-পরিহিত অভিনেতাই প্রথম মূকাভিনয় প্রদর্শন করেছিলেন। Pantomime শব্দটির অর্থ বিশুদ্ধ অনুকৃতি। তখনকার সময়ে প্ৰতিটি দেশের জীবজন্তুর অনুকরণ, বলিদান আদি অনুষ্ঠানরত Pantomime এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। অনুকরণ এবং অঙ্গভঙ্গির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েই আধুনিক মাইম বা মূকাভিনয়ের প্রচলন বাড়তে থাকে।
মূকাভিনয়ের জনক অবশ্য বলা হয় ফ্রান্সের মার্সেল মার্সোকে। প্রতি বছর ২২ মার্চ তাকে স্মরণ করেই পালিত হয় বিশ্ব মূকাভিনয় দিবস। ট্রেডিশনাল মাইম, মডার্ন মাইম, প্রেসেন্ট মাইম- এই তিন রকম ভেদেই সারাবিশ্বে মূকাভিনয়ের চর্চা হয়।
বাংলাদেশে মূকাভিনয় শব্দটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে বেশি দিন হয়নি। খুব সাম্প্রতিক সময়ে এই শিল্পটির প্রতি অনুরাগ দেখা গেলেও আদতে এই শিল্পটি অবহেলিত ছিল বহুদিন। ফ্রান্সের নাইট উপাধি পাওয়া পার্থ প্রতিম মজুমদারের কল্যাণে অনেক মানুষ মূকাভিনয় সম্পর্কে ধারনা পান। বাংলাদেশে দলগতভাবে মূকাভিনয় শুরু হয় ১৯৮৯ সালে ‘ঢাকা প্যান্টোমাইম’ নামে একটি দলের মাধ্যমে।
বর্তমানে মূকাভিনয় চর্চার সাথে জড়িত আছেন অনেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মূকাভিনয় শিল্প চর্চার ফ্ল্যাটফর্ম হিসেবে গঠন করা হয়েছে দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক মূকাভিনয় সংগঠন ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন’।