তিনি কথা বলা শেখান
- মো. আসাদুজ্জামান
যিনি ঠিকমতো কথা করতে পারতেন না, তিনিই আজ অন্যদের কথা শেখাচ্ছেন! চেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পারে, সেটাই করে দেখালেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম হোসেন। পড়ছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের চূড়ান্ত পর্বে। বিশ্ববিদ্যালয়ে লাজুক আর স্বল্পভাষী হিসেবে বেশ পরিচিতি ছিল ইব্রাহীমের। ক্লাসে গিয়ে নিজেকে ঠিকমতো উপস্থাপন করতে না পারা যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। ছোটবেলায় স্কুলে একবার ভালোভাবে কথা বলতে না পারায় ধমকও খেয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে ডিবেট কিংবা প্রেজেন্টেশন তো তার কাছে জটিল এক রসায়নের নাম। কিন্তু হঠাৎ একদিন প্রেজেন্টেশন নেওয়ার ঘোষণা আসলো বিভাগের আওয়াল স্যারের পক্ষ থেকে। ইব্রাহীম পড়লেন মহা বিপদে। কীভাবে প্রেজেন্টেশন দিবেন এমন ভাবনা তাড়িযে বেড়াল তাকে। কারণ সেটাই ছিল তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম প্রেজেন্টেশন! সেদিন দুরু দুরু বুকে সবার সামনে দাঁড়ালেন। কথা বলতে বলতে গলায় পানি শুকিয়ে মরুভূমির মতো অবস্থা! পরিশেষে ৫ এর ভিতরে ১.২৫ নম্বর পেয়েই খুশি থাকতে হলো তাকে। এরপর বড় ভাই নুর-ই-আলম, হাসিবুর রহমান হিমু, রিয়াজুল ইসলাম দিপু, তাসিন আহমেদের অনুপ্রেরণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় বিতর্ক সংগঠন জেইউডিও সঙ্গে পথ চলতে শুরু করলেন।
প্রথম দিন তেমন কোনো কথা বলতে পারলেন না। শুধু শুনলেন। এরপর দৃঢ প্রতিজ্ঞতা আর ধৈর্য নিয়ে নিয়মিত অনুশীলন করতে লাগলেন। যে সময় অন্য বন্ধুরা অলস সময় কাটাতেন তখন ইব্রাহীমকে খুঁজে পাওয়া যেত টিএসটির ১১ নম্বর কক্ষে। কখনও প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা কিংবা সংসদ সদস্য হিসেবে অন্যদের নাস্তানুবুদ করতে দেখা যেত ইব্রাহীমকে। এভাবে বিতর্কে পেলেন সাফল্যও। ২০১৫ সালে জেইউডিও আয়োজিত ৮ম আন্ত:হল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানার আপ হলো তার দল। এর কিছু দিন পর ৯ম আন্ত:বিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতায়ও ফাইনাল রাউন্ডে রানার আপের শিরোপাটিই নিতে হলো। কিন্তু একই বছর ৯ম এসডিএফ জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলেন ঠিকই। পরে ২০১৬ সালের ডিবেটিং সোসাইটি অব ইকোনমিক্স আয়োজিত জাতীয় বাংলা বারোয়ারি বক্তৃতা প্রতিযোগিতায়ও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। পরবর্তীতে বিবিএর শেষ প্রেজেন্টেশনে সবাইকে অবাক করে ইব্রাহীম পেলেন ৫ এর মধ্যে ৪!
ভালোভাবে ‘কথা বলতে না পারা’ সেই ছেলেটি আজ দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় বিতর্ক সংগঠন জেইউডিও’র সহ-সভাপতি হিসেবে। যেখান থেকে বের হচ্ছে তার মতোই অনেক বিতার্কিক। এর আগে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবেও দাযিত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া আহব্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কার্যকরী সদস্যদের কর্মশালা, ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও আন্ত:হল বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রথম আন্ত: বিতর্ক প্রতিযোগিতা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, টিআইবি-জেইউডিও জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শিশু নির্যাতন বিরোধীসহ বিভিন্ন জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এ পর্যন্ত ১৬টির ও বেশী জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
খুলনার ছেলে ইব্রাহীম যশোরের দিঘলিয়া এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে এসএসসি এবং দৌলতপুর কলেজ থেকে একই বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।
নতুন বিতার্কিকদের জন্য পরামর্শ চাইলে মিষ্টি হেসে ইব্যাহীম বলেন, ‘সবার বিতর্ক করা উচিত কারণ মানুষের পরিবর্তনের জন্য একটা যুক্তিই যথেষ্ট। আর বিতর্কের মাধ্যমে সেটির সন্ধান পাওয়া যায়।’ নিজের স্বপ্ন সম্পর্কে জানান, ব্র্যান্ড হতে চান। অন্যকে অনুসরণ নয় বরং নিজেই ব্র্যান্ড হতে চাই।’