তিন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা নেই
- নিউজ ডেস্ক
অষ্টম শ্রেণির ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো মাতৃভাষা বাংলা বিষয়ে দক্ষতার জাতীয় গড় স্তর (কাঙ্ক্ষিত) অর্জন করতে পারছে না। বাংলা বিষয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৩০ শতাংশের কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা নেই। অষ্টম শ্রেণির ইংরেজিতে ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী গড় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। সব মিলিয়ে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে বিষয়ভেদে ২৩ থেকে ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা নেই।
এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতার এ চিত্র উঠে এসেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদারক ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রতিবেদনে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে এক কর্মশালায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সারা দেশের মাধ্যমিক স্তরের ৫২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণির ১৫ হাজার ৮১০ জন ও অষ্টম শ্রেণির সমসংখ্যক শিক্ষার্থীর বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে শেখার দক্ষতার ওপর মূল্যায়ন পরীক্ষা (টেস্ট) নিয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর এই মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়।
কর্মশালায় এই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থিত সাংবাদিকসহ অন্যদের দেওয়া হয়। মাউশির তদারক ও মূল্যায়ন বিভাগের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষাক্রমের সঙ্গে মিল রেখে বইয়ের বাইরের বিষয়ে প্রশ্ন করে মূল্যায়ন পরীক্ষাটি নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে প্রতিটি বিষয়ে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কতটুকু দক্ষতা অর্জন করেছে, তা জাতীয় গড়সহ পাঁচটি স্তরে (ব্র্যান্ড) ভাগ করে দেখানো হয়। এতে ষষ্ঠ শ্রেণির গণিতে ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় গড় বা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি, অর্থাৎ এরা খারাপ স্তরে আছে। বাকি ৭৭ শতাংশ গড় বা তারও বেশি দক্ষতা অর্জন করেছে। ইংরেজিতে ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী গড় বা তারও বেশি দক্ষতা অর্জন করলেও ২৯ শতাংশ খারাপ অবস্থায় আছে। অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণিতে গণিতে ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী গড় দক্ষতার চেয়ে পিছিয়ে।
প্রতিবেদন বলছে, ষষ্ঠ ও অষ্টম—এ দুই শ্রেণিতেই গণিতে ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা ভালো। ষষ্ঠ শ্রেণিতে গণিতে গড় দক্ষতা অর্জন করেছে ৮০ শতাংশ ছাত্র ও ৭৫ শতাংশ ছাত্রী। তবে এই শ্রেণিতে বাংলায় ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা সামান্য এগিয়ে। ইংরেজিতে ছাত্র ও ছাত্রী সমানে সমান।
অষ্টম শ্রেণিতে গণিতে জাতীয় গড় দক্ষতা স্তরে আছে ৬২ শতাংশ ছাত্র ও ৫২ শতাংশ ছাত্রী। এই শ্রেণিতে বাংলা ও ইংরেজিতেও সামান্য এগিয়ে ছাত্ররা।
এলাকাভেদে এ দুই শ্রেণিতেই তিন বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে। সবচেয়ে খারাপ সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের চেয়ে সাধারণ ধারার শিক্ষার শিক্ষার্থীরা শেখার দক্ষতায় এগিয়ে।
কর্মশালায় জানানো হয়, এই মূল্যায়নে সবচেয়ে ভালো বলে বিবেচিত হয়েছে রাজশাহীর বোয়ালিয়ার খাদেমুল ইসলাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ এবং সবচেয়ে দুর্বল বিবেচিত হয়েছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের উত্তর কুশিয়ারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
‘কলেজে ১১টার পর বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী থাকে না’: কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বেশির ভাগ কলেজে বেলা ১১টার পর বেশির ভাগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায় না। শিক্ষার্থীরা সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে আসে। তারা আসে কোচিং করতে। সকালে যে শিক্ষার্থী আসে, সে কোচিং করে ক্ষুধার্ত হয়ে বাড়ি চলে যায়। আবার অনেক শিক্ষক মনে করেন, ক্লাসে পড়ালে কোচিং-প্রাইভেটে শিক্ষার্থীরা আসবে না। মন্ত্রী শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার ওপর নজর দিতে শিক্ষা প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন।
নোটবই থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন না করার নির্দেশ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কেউ নোটবই থেকে প্রশ্ন করলে তা বাতিল করা হবে এবং তাঁকে শাস্তি পেতে হবে।
মাউশির মহাপরিচালক এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, তদারক ও মূল্যায়ন শাখার পরিচালক মো. সেলিম, শিক্ষার মান উন্নয়ন-বিষয়ক দুটি প্রকল্পের পরিচালক জহির উদ্দিন বাবর, মাহামুদুল হক প্রমুখ।