কুইক রেন্টালের সংখ্যা বাড়ছেই
- নিউজ ডেস্ক
২০১৩ সালের পর দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (কুইক রেন্টাল) থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি ছিল সরকারের। কিন্তু বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে না আসায় কুইক রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হয় পাঁচ বছর। তবে ২০১৮ সালের পর কুইক রেন্টাল আর থাকবে না, এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় সে সময়। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, কুইক রেন্টালের সংখ্যা কমছে না, বরং বাড়ছেই।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে উৎপাদনে রয়েছে ৩২টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৮। যদিও ২০১৫ সালে দেশে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল ১৭টি। তার আগে ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল আরো কম, ১৫টি। এর আগের তিন বছর ২০১৩, ২০১২ ও ২০১১ সালে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল সাতটি করে।
গ্যাস ও তেলভিত্তিক— দুই ধরনের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রই চালু আছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। পিডিবির গ্যাসচালিত কেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ২ টাকার নিচে হলেও কুইক রেন্টালে (গ্যাসভিত্তিক) এ ব্যয় ৬ টাকার ওপরে। এমনকি বেসরকারি খাতের দীর্ঘমেয়াদি (গ্যাসভিত্তিক) কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যয়ও গড়ে ২ টাকা। আর তেলচালিত কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় প্রতি ইউনিট ১৬-১৭ টাকা।
তার পরও কুইক রেন্টালের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। তবে যত দিন পর্যন্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না আসছে, তত দিন কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চলবে।
বর্তমানে ১৮টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে এগ্রিকোর রয়েছে পাঁচটি, যেগুলোর উৎপাদনক্ষমতা ৩৮০ মেগাওয়াট। ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে দুটি। একটি করে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ম্যাক্স পাওয়ার, দেশ এনার্জি, আইইএল পাওয়ার, সামিট পাওয়ার, পাওয়ারপ্যাক, একম, ইউনাইটেড, কেপিইএল, খানজাহান পাওয়ার, নর্দান পাওয়ার ও আমনুরা পাওয়ারের।
জানা গেছে, ২০০৯-১৪ সাল পর্যন্ত মোট নয়টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়। মেয়াদ বাড়ানো কোম্পানিগুলো হচ্ছে দেশ এনার্জির ১০০ মেগাওয়াট, আরজেড পাওয়ার কোম্পানির ৫০ মেগাওয়াট, যুক্তরাজ্যভিত্তিক এগ্রিকো পাওয়ারের ৫৫ মেগাওয়াট, এনার্জিস পাওয়ারের ৫৫ মেগাওয়াট, কোয়ান্টাম পাওয়ারের ১১০ মেগাওয়াট, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ও ইউনাইটেড গ্রুপের ১১০ মেগাওয়াট এবং প্রিসিশন এনার্জির ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ম্যাক্স পাওয়ার লিমিটেডের ঘোড়াশালের ৭৮ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ও ডিপিএ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জের পাগলায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ পাঁচ বছর করে বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্ধারিত সময়ের দু-তিন বছর পরও উৎপাদনে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দুই বছরের আগে উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা নেই। গ্যাস সরবরাহ নিয়েও সংকট রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে।
তবে এর মাধ্যমে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উন্নয়ন ত্বরান্বিত না করে বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা হচ্ছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পিডিবির কাছ থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ভাড়া পায়। জ্বালানি খরচও দিতে হয় পিডিবিকে। তাই ভর্তুকি দিয়েও পিডিবির লোকসান কমানো যাচ্ছে না।
২০১০-১১ অর্থবছরে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে শুরু করে। বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনায় ওই অর্থবছরই লোকসানে পড়ে পিডিবি। বিদ্যুৎ বিভাগের কুইক-রেন্টালের শুরুর বছর ২০১০-১১ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান হয় ১ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। পরবর্তীতে লোকসানের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ১২ হাজার ৮৮১ মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ৮২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৩৫টি, ভাড়াভিত্তিক ২০টি ও ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) ২৭টি। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পিত কোটা পূর্ণ হলেও সরকারি মালিকানাধীন ৩৫টির মধ্যে মাত্র ২১টি কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে।
পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু ২০১৮ সালের আগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে।