শিক্ষা বাজেট ২০% করার সুপারিশ
- নিউজ ডেস্ক
ইউনেস্কো ঘোষণার অনুসমর্থনকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশেও বার্ষিক মোট বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন সিনেট কক্ষে ‘উচ্চশিক্ষা, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং নতুন ভ্যাট নীতি বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ সুপারিশ জানানো হয়।
সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি আয়োজিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার ও সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।
প্রবন্ধে চলতি বছরের বাজেট পর্যালোচনার পাশাপাশি আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উচ্চশিক্ষা, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং নতুন ভ্যাট নীতি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনেকগুলো সুপারিশ তুলে ধরেন তারা।
প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৭ শতাংশ। শিক্ষাখাতে এই বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রশংসার দাবিবার।
“কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও উল্লেখ্য যে, ইউনেস্কো ঘোষণার অনুসমর্থনকারী দেশ হিসাবে একটি দেশের প্রকৃত টেকসই উন্নয়নের জন্য বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ এবং জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়া উচিৎ।
“বাংলাদেশ বরাবরের মতো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করব আগামী বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে ইউনেস্কো ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করা হবে।”
২০১৪ সালে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অন্য কয়েকটি দেশের তুলনামূলক চিত্র দেখিয়ে প্রবন্ধকাররা জানান, বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ সার্বিক শিক্ষা খাতে জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছিল। প্রতিবেশী ভারতে এটি ছিল ৩ দশমিক ২ শতংশ। আর মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় ছিল যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৩ শতাংশ করে।
শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সঙ্গে ধর্ম, পরিবার কল্যাণ বা তথ্য প্রযুক্তি খাতকে যুক্ত করলে প্রকৃত বরাদ্দ হ্রাস পায় বলে এই প্রবণতা থেকেও বাইরে আসার সুপারিশ জানানো হয়।
অন্যদিকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরি, উচ্চ শিক্ষা প্রভৃতি বিবিধ খাতে পুনঃবন্টন করার কারণে এই খাতের বরাদ্দ বাস্তবে অপ্রতুলই থেকে যায় বলে মন্তব্য করেন প্রবন্ধকাররা।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, উচ্চশিক্ষা খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরিসহ শিক্ষার সকল স্তরে বাজেট বাড়ানো প্রয়োজন।
শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি প্রতিবছরই বাজেটের আগে ওঠে
নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে জামানতবিহীন ঋণপ্রাপ্তির সুযোগকে আরও বিস্তৃতির সুপারিশ করেন অধ্যাপক ইউসুফ।
তিনি বলেন, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ প্রাপ্তি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রয়োজনে ঋণের নিশ্চয়তা প্রদানকারী হিসেবে শুধু ব্যক্তি নয়, সংগঠনের নাম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত নারী উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ প্রাপ্তির সুবিধার জন্য ১০০ কোটি টাকার যে তহবিল গঠনের প্রস্তাব চলতি অর্থ বছরের বাজেটে করা হয়েছিল, সেটা আগামী বাজেটে বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে বিক্রেতা নয়, ক্রেতা পর্যায়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে মন্তব্য করে মূল প্রবন্ধে জনগণের ভোগান্তির রোধে উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেন অধ্যাপক বজলুল হক।
তিনি বলেন, “ভ্যাট ও সেলস ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা ভূক্তভোগী হতে পারে। ভ্যাট বৃদ্ধি করলে সরকারের রাজস্ব আয় যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ঠিক তেমনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফরে ভোক্তা তথা সাধারণ মানুষের জীবন নির্বাহ একই পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।
“ব্যবসায়িক গোষ্ঠীসমূহ প্রায়শই মনে করে থাকেন যে ভ্যাট মানে তাদের ব্যবসায়িক আয় থেকে আদায় করে নেওয়া কর। এটি একটি ভুল ধারণা। মূলত ভ্যাট পদ্ধতির মাধ্যমে বিক্রেতা তার প্রদেয় করের ভার ক্রেতার কাছে হস্তান্তরের সুযোগ পায়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।