প্রশাসনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে ইকোনমিক ক্যাডার
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
অবশেষে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে ইকোনমিক ক্যাডার। ইকোনমিক ক্যাডারের ৪৬৪ জন কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হওয়ার পর এটি পুনর্গঠন করা হবে। এরপর কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সমন্বিত মেধা তালিকা অনুযায়ী। পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ৩০ মে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিও সম্মতি দিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, দুই ক্যাডার একীভূত করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত ও বাস্তবায়ন করতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। মূলত এ কমিটি যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। এটি কার্যকর হলে উভয় ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপকৃত হবেন। ফলে তারা সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন। এতে প্রশাসনের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।
১৮ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি জানান, বিসিএস প্রশাসন ও ইকোনমিক ক্যাডার একীভূত হলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। অন্য মন্ত্রণালয় ও ক্যাডারের প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়ে প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, এতে সরকারের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষমতা ও কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। বৈঠকে এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সচিব কমিটির সম্মতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করা হবে।
এরপর ৩০ মে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নতুন ক্যাডার গঠন না করে ক্যাডারের সংখ্যা কমানোর পক্ষে সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ক্যাডারের কাজের ধরন একই, সেসব ক্যাডারকে একীভূত করার চিন্তাভাবনা শুরু করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে সচিবালয় ক্যাডার একীভূত করার মতো ইকোনমিক ক্যাডারও একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১০ সালে তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকারের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর দুই ক্যাডার একীভূত হওয়ার বিষয়ে উভয় ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়। ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট এ বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে একটি আধা সরকারিপত্র দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চিঠিতে তিনি বলেন, বহুদিন ধরে বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্তের উদ্যোগ নেয়া হলেও এর কোনো গতি নেই। এ ক্যাডার বিলুপ্ত করে এর সদস্যদের প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হলে একটি বড় ধরনের প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়িত হবে।
উভয় ক্যাডারের কার্যপরিধির বিষয়ে সচিব কমিটির সারসংক্ষেপে বলা হয়, উভয় ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারের নীতি, উন্নয়ন পরিকল্পনা, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জড়িত। তাদের কাজের প্রকৃতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রায় একই রকম এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ইকোনমিক ক্যাডারের ৪৬৪ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে ২৩১ জনই সহকারী প্রধান ও সিনিয়র সহকারী প্রধান। যাদের সহজেই পদবি পরিবর্তনের মাধ্যমে সহকারী সচিব, সহকারী কমিশনার এবং সিনিয়র সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদে পদায়ন করা সম্ভব। এছাড়া ৮৪ জন উপপ্রধান এবং যুগ্ম প্রধান ও বিভাগীয় প্রধান পদে মোট ৫১ কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। এসএসবির সুপারিশের মাধ্যমে উপপ্রধানকে উপসচিব, যুগ্ম প্রধানকে যুগ্ম সচিব এবং বিভাগীয় প্রধানকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদায়ন করা যেতে পারে। প্রশাসন ক্যাডারের ৪ হাজার ৮৪৫ জন কর্মকর্তার সঙ্গে ইকোনমিক ক্যাডারের এসব কর্মকর্তা একীভূত হলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে ৫ হাজার ৩০৯ জনে। ফলে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
এজন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- উভয় ক্যাডার একীভূত হওয়ার পর বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার পুনর্গঠন করতে হবে। উভয় ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে পিএসসির সমন্বিত মেধাতালিকা অনুযায়ী। একীভূত ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ে নিয়োগ করা হবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, পিএসসিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি রয়েছেন। উভয় ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে পিএসসির সম্মিলিত মেধা তালিকা অনুসরণ; উভয় ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে যে তারিখ থেকে ওই পদে কর্মরত আছেন, সেই তারিখ থেকে ওই পদের সমপদে তাদের চাকরিকাল বিবেচনা করা হবে। এছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে অপশন প্রদান, পদায়নের জন্য সিনিয়র স্কেল পদ ও এন্ট্রি পদে মোট চাকরিকাল গণনা, উভয় ক্যাডারসংশ্লিষ্ট মৌলিক ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এই কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইকোনমিক ক্যাডারের এক কর্মকর্তা জানান, পদোন্নতি, পদের নাম পরিবর্তন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ কিছু দাবি নিয়ে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন তারা। ১৯৯৬ সাল থেকে এ দাবি জোরালো হলেও তা পূরণ হচ্ছিল না। এ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছিল। উভয় ক্যাডার একীভূত হলে অনেক কাজে সুবিধা হবে, এতে দ্বিমত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি আরও জানান, একসময় সচিবালয় ক্যাডার আলাদা ছিল। ফলে সচিবালয় ক্যাডারদের মধ্যে অহেতুক একটা দ্বন্দ্ব থাকত। কে থাকবেন সচিবালয়ে আর কে থাকবেন মাঠে, তা নিয়ে বিরোধ তৈরি হতো। এরপর সচিবালয় ও প্রশাসন ক্যাডার একীভূত হওয়ায় সেই দ্বন্দ্ব কেটে গেছে। ইকোনমিক ক্যাডার একীভূত হলে আর কোনো দ্বন্দ্ব থাকবে না।