শিকড়ের খোঁজে বাংলাদেশে
নিউজ ডেস্ক : নেদারল্যান্ডসে বেড়ে ওঠা সুলতানা ভ্যান ডি লিস্ট ৩৭ বছর পর বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন স্বজনদের খোঁজে। বাংলাদেশে শৈশবের স্মৃতি বলতে ঝাপসাভাবে তাঁর মনে আছে কেবল চট্টগ্রামের দোহাজারী এলাকার রেললাইন আর রেললাইনের পাশে এক ব্যস্ত বাজার। নিজের জন্মদাত্রী মা, জন্মদাতা বাবার নামটি মুছে গেছে স্মৃতি থেকে। জানা নেই অন্য কোনো স্বজনের নাম-ঠিকানাও।
তবু স্বজনদের খুঁজে পেতে সবার সহযোগিতা চেয়ে আজ (৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সুলতানা। সঙ্গে ছিলেন স্বামী ইউরি জ্যাকবস, একমাত্র সন্তান নোয়া আবেদ নাবিলাহ জ্যাকবস। বাংলাদেশে তাঁদের সহায়তা করছেন দুজন স্থানীয় ব্যক্তি মো. ইসমাইল শরীফ আর তাঁর বন্ধু শরীফ মো. ওমর আলী। তাঁরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
‘শাপলা’ ও স্লোব বাংলাদেশ নামের নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক একটি বাংলাদেশি সংগঠনের মাধ্যমে কয়েকজন বাংলাদেশি দত্তক শিশু নানা সময়ে তাঁদের শেকড়ের সন্ধানে এ দেশে এসেছেন, অনেকে সফলও হয়েছেন। সবকিছু দেখে শুনে তাঁর নিজের ভেতরেও এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়, নিজের শেকড়কে জানার তীব্র ইচ্ছা জন্মে।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা বলেন, ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তাঁকে তাঁর দাদি আইনগতভাবে ঢাকায় অবস্থিত নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক একটি শিশুকল্যাণ সংস্থার হাতে তুলে দেন। সেখান থেকে একটি ডাচ পরিবার তাঁকে দত্তক সন্তান হিসেবে নেদারল্যান্ডসে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি ডাচ নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠেছেন। তিনি আরও বলেন, ওই দেশে তাঁর মতো অনেক বাংলাদেশি শিশুকে দত্তক হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একসময়। তাঁরা সেখানে ‘শাপলা’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। ‘শাপলা’ ও স্লোব বাংলাদেশ নামের নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক একটি বাংলাদেশি সংগঠনের মাধ্যমে কয়েকজন বাংলাদেশি দত্তক শিশু নানা সময়ে তাঁদের শেকড়ের সন্ধানে এ দেশে এসেছেন, অনেকে সফলও হয়েছেন। সবকিছু দেখে শুনে তাঁর নিজের ভেতরেও এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়, নিজের শেকড়কে জানার তীব্র ইচ্ছা জন্মে।
দত্তককালীন সময়ের একটি এফিডেভিটের কপি সম্বল করে সুলতানা এ দেশে এসেছেন। ওই কপি অনুযায়ী, তাঁর দাদির নাম রহিমা খাতুন আর দাদার নাম কদম আলী। লেখা আছে, সুলতানার মা-বাবা বেঁচে নেই। তার খরচ বহনে অক্ষম দাদি কোনো দাবি ছাড়াই নাতনিকে দত্তক দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানাকে সহায়তাকারী মো. ইসমাইল শরীফ বলেন, শুক্রবার ও শনিবার তাঁরা দোহাজারীতে সুলতানার শেকড়ের সন্ধান করবেন। এ জন্য তাঁরা আগে থেকেই চন্দনাইশ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আশা করছেন, ওখানে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা পাবেন।
স্বজনের খোঁজে সুলতানা বাংলাদেশে এসেছেন ১ ফেব্রুয়ারি। ফিরে যাবেন ১২ ফেব্রুয়ারি। স্বজনের খোঁজ পেলে কী করবেন—সাংবাদিকেরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি মৃদু হেসে বলেন, ‘এখনো জানি না। তবে তাঁদের খুঁজে পেলে খুব ভালো লাগবে।’