শ্রমবাজারে প্রযুক্তিগত শিক্ষার ঘাটতি
- নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজারে বড় ঘাটতি হচ্ছে শ্রমিকের দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা। এ কারণে শ্রমিকের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ছে না। প্রযুক্তি শিক্ষার অভাবে চাকরির বাজারে জনবলের ঘাটতি না থাকলেও দক্ষ জনবলের বড় অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে সাহসী উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগ পরিবেশেরও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে এ অঞ্চলের আধিপত্য বিস্তার ঘটছে না। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ শিল্পকারখানার কমপ্লায়েন্সই নিুমানের। উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটিরশিল্পেই বেশি। বিনিয়োগ কম রফতানিমুখী শিল্পে। এর ফলে এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের বাজারও সেভাবে সম্প্রারণ করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বের হতে না পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন থেকে ছিটকে পড়তে হবে। কারণ এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতই পারে চালকের ভূমিকা পালন করতে।
‘টেকসই শিল্পায়ন : চাকরির বাজারে ব্যাপকভিত্তিক সম্ভাবনা ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রবন্ধে এ আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। দুই দিনব্যাপী নবম সাউথ এশিয়া ইকোনমিক সামিটের শেষদিনের অধিবেশনে ভারতের জওয়াহেরলাল নেহরু ইন্সটিটিটিউট অব অ্যাডভান্স স্ট্যাডিজের ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত পরিচালক অধ্যাপক আরিফ ওয়াকিফ শিল্পায়ন ও কর্মসস্থানবিষয়ক এ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আরিফ ওয়াকিফ বলেছেন, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান শিক্ষা ও দক্ষতার ঘাটতিতে শুধু বাংলাদেশই নয়। বরং পুরো দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোরও অভিন্ন চিত্র খুঁজে পাওয়া যাবে। এখানে বৃহৎ শিল্পায়নের চেয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের আধিক্য বেশি। এখানে কম বেতনে শ্রমিকরা কাজ করে। এদের পেশাগত ও প্রযুক্তিগত দক্ষতাও কম। কম মজুরি নিয়ে নিুমানের পরিবেশে তাদের উৎপাদন সক্ষমতাও কম। আবার এর ব্যতিক্রম চিত্রও রয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর বৈশ্বিক বাস্তবতার কারণেই শিল্প বিল্পবের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক রফতানিমুখী শিল্প গড়ে ওঠেছে। তবে এক্ষেত্রে সংকট হল দক্ষ উদ্যোক্তা এবং দক্ষ শ্রমিকের। ফলে পণ্যের বহুমুখীকরণ সুবিধা পাচ্ছে কম। উন্নত দেশের তুলনায় এ অঞ্চলের রফতকানিমুখী শিল্পে ব্যাপকভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তি ও মূলধনি যন্ত্রপাতির প্রতিস্থাপন এবং কর্মপরিবেশ আশানুরূপ নয়। এছাড়া শিল্পের মধ্যবর্তী ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা, মজুরিবৈষম্য প্রকট। সব মিলিয়েই শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে পিছিয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলো। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, কমপ্লায়েন্স উন্নয়নের জন্য উদ্যোক্তারা চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের এ চেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন খোদ বিদেশী ক্রেতারাই। কারণ কমপ্লায়েন্সমান উন্নয়নের জন্য বিশাল বিনিয়োগের দরকার হবে। শ্রমিকের মজুরি বাড়াতে হচ্ছে। কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে হচ্ছে। শ্রমিকের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে। নতুন নতুর মুলধনি যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের দরকার পড়ছে। এর ফলে উদ্যোক্তার বড় ধরনের বিনিয়োগ ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। কিন্তু এ ঝুঁকি নেয়ার পরও যদি বিদেশী ক্রেতারা পণ্যের দাম সেভাবে না বাড়ায় তাহলে বৈশ্বিক প্রতিযোগী সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়বে উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের শিল্পে কমপ্লায়েন্সমান উন্নয়নে বাড়তি খরচের ভাগ তিনি ক্রেতাদেরও বহন করতে হবে বলে দাবি করেন। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে শিল্প ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আরও সহজতর ও নীতিগত সহায়তা দেয়ার পরামর্শ দেন।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, সব দেশেই দু’ধরনের শিল্প থাকে। রফতানিমুখী শিল্পের চেয়ে অভ্যন্তরীণ শিল্প (এসএমই) একটু পিছিয়েই থাকে। তবে দু জায়গাতেই কর্মসংস্থান হচ্ছে। তিনি দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন, উদ্যোক্তারা চেষ্টা করছেন পণ্যের বহুমুখীকরণের। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের মেলে ধরার। পাশাপাশি এসডিজি অর্জনে শিল্পক্ষেত্রে যে কর্মসূচি রয়েছে তা অর্জনের। এর লক্ষ্যে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারেও উদ্বুদ্ধ করতে সহায়তা করছে। একই সঙ্গে মজুরিমূল্য বাড়িয়ে জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে।
সূত্র: যুগান্তর