কোটিপতি বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না
- নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে দুই হাজার ৬৩৫ জন। আর গত পাঁচ বছরে এর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ধনীদের এসব সম্পদ উৎপাদনশীল কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর অন্যান্য দেশে থাকলেও বাংলাদেশে তা হচ্ছে না। ফলে ক্রমেই বাড়ছে বেকারত্ব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্পদের অসম বণ্টন ও অবৈধ আয়ের কারণে আয়-বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সম্পদ ক্রমেই কিছুসংখ্যক লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি না হওয়ায় উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। তাদের মতে, হাতেগোনা কিছু উদ্যোক্তা বা শিল্পগ্রুপ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। কিন্তু নতুন উদ্যোক্তা কিংবা শিল্পগ্রুপ তৈরি হচ্ছে না। তাই উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি করা জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক কোটি টাকার ওপরে আমানত রেখেছেন, এমন গ্রাহক রয়েছেন ৪৫ হাজার ৬৯৮ জন। এর তিন মাস আগে, মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৬৩ জন। আর ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৮০৮।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪৫ হাজারের বেশি কোটিপতি থাকলেও বাড়ছে না কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। পাঁচ বছরের মাথায় কোটিপতির সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও চাকরিতে নিয়োগদানের হার মাত্র ২০ শতাংশ। অর্থাৎ কোটিপতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকার মানুষের সংখ্যা। দেশে বেকারের সংখ্যা কত, তা নিয়ে অবশ্য নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বিশ্ব যুব কর্মসংস্থান প্রবণতা, ২০১৫’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ১০০ জন উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীর মধ্যে বেকার ২৬ দশমিক ১ জন। বাংলাদেশি যুবশক্তির সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ বেকার।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্যমতে, দেশে বেকার যুবক-যুবতীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি বেকার যুবকের সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ। কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তা প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩২ লাখে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে কমে গেছে ঋণের চাহিদা। ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় বাড়ছে। দেশে বিনিয়োগ কম হওয়ায় কর্মসংস্থানসহ গোটা অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন বড় অঙ্কের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অথনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে, এটি ইতিবাচক দিক। তবে তারা যদি ব্যাংকগুলোতে অর্থ পুঞ্জীভূত না করে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করেন, তবে দেশে উৎপাদনশীল কর্মকা- ও কর্মসংস্থান বেড়ে যাবে, যা অর্থনীতির চাকাকে আরো গতিশীল করবে। দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়লেও বেকারত্ব কমছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘গত দুই বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ কিছুটা কম হয়েছে-এটাই মূল কারণ’।