বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা যাবে না
- নিউজ ডেস্ক
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করতে পারবে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তাদের জন্য তৈরি করতে হবে উপযুক্ত বেতন কাঠামো। আর বাড়তি দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষকদের দিতে হবে পারিতোষিক (সম্মানী)। এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এই বিধিমালার অধীনে সংশ্লিষ্ট সবার নিয়োগ, পদোন্নতি বা চাকরিচ্যুত করতে হবে। এ ব্যাপারে খুব শিগগির একটি নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
সূত্র জানায়, ইউজিসির নির্দেশনায় বলা হবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ধারা ৩৭ অনুযায়ী প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, প্রশাসনিক, আর্থিক ও অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন সম্পর্কিত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধি প্রণয়নপূর্বক বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও সরকারের মাধ্যমে চ্যান্সেলরের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। ৪৩ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য উপযুক্ত বেতন কাঠামো, উৎসব ভাতাদিসহ চাকরি প্রবিধানমালা প্রস্তুত করতে হবে। একই সঙ্গে পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালনসহ পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকদের পারিতোষিক দিতে হবে। পত্র পাওয়ার ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কমিশনকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কমিশন পরবর্তীতে এটি মনিটরিং করবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষকসহ তাদের জনবলের চাকরি নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন খুবই কম। পদোন্নতির সময় হলে ছাঁটাই করা হয়। শিক্ষকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যথানিয়মে সম্মানী দেয় না। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে বেতনই দেয় না। দিলেও সময়মতো হয় না। এমনি নানা কারণে বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে (বিওটি) চাকরি প্রবিধানমালা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা জেনেছি, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চাকরির প্রবিধান নেই। অথচ এটা তৈরি করা তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে শিগগিরই এ ব্যাপারে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, চাকরি প্রবিধানমালা না থাকায় বিওটি সদস্যরা শিক্ষকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে থাকেন। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে সপ্তাহে ৭-৮টি কোর্স পড়াতে হয়। এ কারণে একাধিক সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ক্লাস নিয়ে থাকেন অনেক শিক্ষক। এতে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার মান বজায় থাকছে না। এখানেই শেষ নয়, একজন শিক্ষককে দৈনিক ৪-৫টা ক্লাস নিতে হয়। ফলে শিক্ষকরা পাঠদানের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু অতিরিক্ত কাজ করানোর পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিচ্ছে না। এর বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষকদের পারিতোষিক না দেয়ার ঘটনা তো আছেই। কিন্তু এসবের প্রতিবাদ করলেই চাকরিচ্যুত করা হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৪৩ ধারা অনুযায়ী, ‘প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য উপযুক্ত বেতন কাঠামো ও চাকরি প্রবিধানমালা প্রস্তুত করে ইউজিসিকে অবহিত করবে। কমিশন অবহিত হওয়ার পর প্রয়োজনে পরামর্শ প্রদান করবে।’
ইউজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বর্তমানে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৮৪টি চালু আছে। এর মধ্যে ৭০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো চাকরি প্রবিধানমালা নেই। এই সুযোগে বিওটি সদস্যরা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করছেন বলে অভিযোগ আছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি উত্তরা একটি ইউনিভর্সিটির শিক্ষক সাদিয়া সুলতানাকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ৪ অক্টোবর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিন্যান্স বিভাগের পরিচালক মো. জহিরুল হক খান ও হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কিছুদিন আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পর্যন্ত করেছেন।
প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও বিওটি সদস্যরা বা মালিকপক্ষ শিক্ষার নামে রমরমা ব্যাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা ৮৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭১টিতে ভিসি নেই। ৫১টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই। ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ তিনটি পদই শূন্য। মাত্র ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের তথ্য হালনাগাদ আছে। এর নেপথ্যেই শিক্ষা বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ আছে।