বাতাস খারাপ ৮ শহরের
নিউজ ডেস্ক : ঢাকাসহ ছয় মহানগর ও ঢাকার পাশের দুটি শহরের বাতাস এখন ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’। বাতাসের মান পরীক্ষা করে এ তথ্য জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ অবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস নিতে গিয়ে মানুষের ফুসফুসে যা ঢুকছে, তা শুধু মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, প্রতিদিন মানুষ দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করে। কিন্তু ফুসফুসে নেয় দুই হাজার লিটার বাতাস। এই শ্বাস গ্রহণের সময়েই ফুসফুসে ঢুকে পড়ছে অস্বাস্থ্যকর বস্তুকণা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট (কেস) প্রকল্পের আওতায় বাতাসের মান খতিয়ে দেখা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। এ জন্য ঢাকায় চারটি, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট মহানগর এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে একটি করে নির্মল বায়ু পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। ১১টি কেন্দ্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে বাতাসকে ভালো, মধ্যম, অস্বাস্থ্যকর, খুব অস্বাস্থ্যকর, অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর—এই মানে চিহ্নিত করা হয়। প্রায় প্রতিদিন এই কেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করেন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত পর্যবেক্ষকেরা। পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, শীতকালে ১১টি কেন্দ্রে যে মানের বাতাস পাওয়া যাচ্ছে, এর চেয়ে বোধ হয় খারাপ অবস্থা আর হতে পারে না।
এদিকে যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) উদ্ধৃত করে বলছে, বায়ুদূষণের কারণে হওয়া ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। আর ২০১২ সালে এই রোগটির কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে যে পাঁচটি দেশে তার একটি হলো বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ধূমপান, সড়ক দুর্ঘটনা এবং ডায়াবেটিস—এই তিনটি রোগে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যায়, বায়ুদূষণের কারণে মারা যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি মানুষ।
পর্যবেক্ষণের তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের কেস প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকাসহ ছয়টি মহানগরেই নভেম্বর মাস থেকে বাতাসের মান অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পাওয়া যাচ্ছে। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
বাতাসের মান বৃদ্ধি ও জনজীবনের ক্ষতির মাত্রা কমাতে গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে আসছে। বিজ্ঞপ্তিতে নির্মাণকাজের সময় চারপাশ ঢেকে রাখা ও পানি ছিটানো, রাস্তা খোঁড়ার সময় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঢেকে রাখা, স্টিল, রি-রোলিং মিলস ও সিমেন্ট কারখানাগুলোয় বস্তুকণা নিয়ন্ত্রণমূলক যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও ধুলাবালি কমাতে বাড়ির চারপাশে সবুজায়ন করা, ইটভাটায় পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার, গাড়ি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা, যানজট এড়াতে ট্রাফিক আইন মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাতাস ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’: বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন মনো-অক্সাইড, সিসা, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড, পার্টিকুলেট ম্যাটার বা বস্তুকণা ও সালফার ডাই-অক্সাইড বায়ুদূষণ ঘটায়। তবে কেস প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ধুলাবালির মধ্যে থাকা বস্তুকণা মানুষের সবচেয়ে ক্ষতি করে। নিরাপদ মাত্রা কতটুকু এবং ক্ষতিকর বস্তুকণা সে তুলনায় কতটা বেশি তার ভিত্তিতে সারা বিশ্বে একই ধরনের সূচক ব্যবহার করেন বিশেষজ্ঞরা। একে বলা হয় ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ (একিউআই)। এ সূচি অনুযায়ী ০-৫০ ভালো, ৫১-১০০ মধ্যম, ১০১-১৫০ সতর্কাবস্থা, ১৫১-২০০ অস্বাস্থ্যকর, ২০১-৩০০ খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১-৫০০ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। ২০ জানুয়ারি চারটি কেন্দ্রের গড় হিসাব অনুযায়ী ঢাকার বাতাসের মান ৩০৬, চট্টগ্রাম ৩২৮, খুলনা ৪১৫, গাজীপুর ৩১৭ এবং নারায়ণগঞ্জে ৫২৩। রাজশাহীর বাতাস ছিল মধ্যম মানের। তবে সিলেট ও বরিশালের তথ্য গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি আরবান ল্যাবের হিসাবে প্রতি মাইক্রোগ্রাম বাতাসে ১-১২ মাইক্রোমিটার বস্তুকণা থাকার কথা। ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় এটি ছিল যথাক্রমে ২২৫, ১৮৪, ২১৪, ২০২ এবং ২২৩ মাইক্রোমিটার। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা শহরে নিয়মকানুন না মেনে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি এবং ভবন নির্মাণ করা হয়। যানবাহনগুলো পুরোনো এবং এগুলোর ইঞ্জিন তেল পুরোপুরি শোধন করতে পারে না, ফলে বাতাসে বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়ায়। মহানগরের চারপাশে মালার মতো থাকা অধিকাংশ ইটভাটা নিয়ম মেনে চলছে না।
কেস প্রকল্পের পরিচালক এস এম মুনজুরুল হান্নান খান বলেন, ‘বায়ুদূষণ রোধে নির্দিষ্ট আইন ও বিধিমালা আছে। আইনে ক্ষতির মাত্রা বিবেচনায় দূষণকারীর ছয় মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে। তবে সচেতনতা না বাড়ালে বায়ু দূষণ কমবে না। কিন্তু আইন না মেনে আমরা সবাই ক্ষতির শিকার হচ্ছি।’