শুভ জন্মদিন ভাটিপুত্র বাউল সম্রাট
ফিচার ডেস্ক : বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের জন্মশতবার্ষিকী আজ। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাউল সুফি সাধক শাহ আব্দুল করিম। দারিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেন তিনি। আর ছেলে বেলা থেকেই শুরু করেন সঙ্গীত সাধনা। বাউল সম্রাটের প্রেরণা স্থান ছিল তাঁর স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। তিনি তাকে আদর করে ডাকতেন ‘সরলা’। স্ত্রীর প্রয়ানের পর সরলাকে নিয়ে গান রচনা করেন তিনি।
ভক্ত-অনুরাগীরা গানের মাঝেই খোঁজেন বাউল সম্রাটের মায়াবি মুখ। উজান ধলের কালনীর তীরে বেড়ে ওঠা রাখাল বালক হয়ে উঠেন জনতার গীতিকবি। সমাজ, সংসার থেকে অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার দূর করতে রচনা করেন অসংখ্য গান। তিনি বেঁচে নেই। রেখে গেছেন অসংখ্য গান।
তাঁর রচিত গানের মিলে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া। বন্ধুরে কই পাবো সখি গো / তুমি বিনে এ ভুবনে কে আছে ঔষধি রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি….। গানের মাঝেই স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন বাউল আব্দুল করিম। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার কথাও উঠে এসেছে তাঁর গানে।
প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ’র দর্শন থেকে তিনি গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। যদিও দারিদ্র তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে তার শ্রম ব্যয় করতে। কিন্তু কোন কিছু তাকে গান থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
তিনি আধ্যাত্মিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়ত, মারফত, নবুয়ত, বেলায়াসহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চা করেছেন।
অধ্যাত্মিকতার দিক থেকে হাসনরাজা, রাধারমন, ফকির দুরবীন শাহ ও মওলানা ইয়াসিনের আধ্যাত্মিক গানের ভাবার্থের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে বাউল করিমের গানের।
কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু/ গানে মিলে প্রাণের সন্ধান/ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম/ কোন মেস্তরী নাও বানাইছেসহ প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান বাউল সম্রাটকে কিংবদন্তির আসনে বসিয়েছে। তাঁর রচিত গানেই ছিল সৃষ্টিকর্তার উপাসনা।
উজান ধলের কালনীর তীরে বেড়ে ওঠা রাখাল বালক হয়ে উঠেন জনতার গীতিকবি। সমাজ, সংসার থেকে অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার দূর করতে রচনা করেন অসংখ্য গান। তিনি বেঁচে নেই। রেখে গেছেন অসংখ্য গান।
ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। গত বছরের প্রথম দিকে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও আগে এসব গান শুধু ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল।
মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গান নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। প্রয়াত বাউল রুহি ঠাকুর, তার ভাই রমেশ ঠাকুর, বাউল আব্দুর রহমানসহ অসংখ্য গায়েন তৈরি করে গেছেন তিনি।
২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আয়োজন: বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিকেলে সিলেটের রিকাবীবাজার এলাকার কবি নজরুল মিলনায়তনে হবে ‘শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উৎসব’। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক শিল্পী ও গবেষক অংশ নেবেন।
শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন পর্ষদের উদ্যোগে এবং প্রথম আলোর সার্বিক সহযোগিতায় উৎসব শুরু হবে বিকেল চারটায়। প্রয়াত বাউলের স্বকণ্ঠে গাওয়া ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানের সঙ্গে ‘ছন্দ নৃত্যালয়’-এর শিল্পীদের পরিবেশনা দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের উদ্বোধন করবেন ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও তাত্ত্বিক তপোধীর ভট্টাচার্য। আলোচনা পর্বে সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মো. সালেহ উদ্দিন, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক, ভারতীয় সাহিত্যিক স্বপ্না ভট্টাচার্য, করিম-তনয় শাহ নূরজালাল অংশ নেবেন।
ভারতের শিল্পী মৌসুমী ভৌমিক, নাট্যকার ও অভিনেতা ফজলুল কবীর ও বাউলসাধকের শিষ্যরা পরিবেশন করবেন শাহ আবদুল করিমের গান।
উদ্যাপন পর্ষদের আহ্বায়ক শুভেন্দু ইমাম বলেন, উৎসব উপলক্ষে শাহ আবদুল করিম: জন্মশতবর্ষ স্মরণ স্মারক-সংকলন প্রকাশিত হবে। এ ছাড়া করিমের বই নিয়ে থাকবে বইমেলা। উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত।