ওই ডাকে বৈসাবি
- মান কুমারী চাকমা
বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি আজ (১৪ এপ্রিল) উদযাপিত হচ্ছে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসব। পাহাড়িদের বর্ষবরণে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বাঙালিদের কাছে বৈশাখ শুধুই একটি সামাজিক উৎসব। আর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব হলো এই বৈসাবি।
বিভিন্ন সমপ্রদায় উৎসবটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকে। চাকমারা বলে বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই আর ত্রিপুরারা বলে বৈসু। অন্য আদিবাসীদের কাছেও এ উৎসবের নিজস্ব নাম রয়েছে। সমপ্রদায়ভেদে এর আয়োজনে বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা দেখা যায়। এখন নাগরিক সমাজে অবশ্য উৎসবটি ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ ও চাকমাদের ‘বিঝু’—তিনটি নামের আদ্যক্ষর ‘বৈ-সা-বি’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ ত্রিপুরাদের বৈসুক থেকে ‘বৈ’, মারমাদের সাংগ্রাই থেকে ‘সা’ এবং চাকমাদের বিঝু থেকে ‘বি’। একসঙ্গে মিলিয়েই তবে বৈ-সা-বি।
নালন্দা চাকমা, প্রিয়তা ত্রিপুরা, শিমু চাকমা, তুষিত চাকমা, জিপু চাকমা ও সাচিনু মারমা পড়ছেন ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এক বিকেলে ঢাকার হাতিরঝিলে এক আড্ডায় আমরা মুখোমুখি হই তাঁদের সঙ্গে।
নালন্দার কাছে জানতে চাইলাম উৎসব সম্পর্কে। নালন্দা বলেন, ‘আমরা চাকমা জনগোষ্ঠী তিন দিন ধরে এই উৎসব পালন করে থাকি, যাকে আমরা বলি বিঝু। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিনকে ফুল বিঝু আর মূল বিঝু বলা হয়। আর নববর্ষের পয়লা দিনকে বলা হয় “গজ্যপজ্যে” দিন। ফুল বিঝুর দিন আমরা খুব সকালে স্নান করে নদীতে ফুল ভাসিয়ে দিই। নিজেদের ঘরবাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়ে থাকি। এরপর পরিবারের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ কর্তাকে পরিবারের ছোটরা স্নান করিয়ে দিয়ে থাকি। তবে এই রীতি এখন আগের চেয়ে কম দেখা যায়।’
বিঝু উপলক্ষে চাকমাদের সবার বাড়িতে ‘পাজন’ নামে ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। এই খাবারে কমপক্ষে পাঁচ ধরনের সবজি মিশ্রিত হয়। তবে কোনো কোনো বাড়িতে ‘পাজন’-এ মিশ্রিত সবজির সংখ্যা ২৫ ছাড়িয়ে যায়। এমনটা জানা যায় জিপু চাকমার কাছ থেকে।
মারমা সমপ্রদায়ের ‘সাংগ্রাই’ উৎসব পালন সম্পর্কে সাচিনু মারমার কাছ থেকে জানা যায় অনেক তথ্য। তিনি বলেন, ‘চৈত্র মাসের শেষ দিন থেকে এই উৎসব চলতে থাকে। নববর্ষের প্রথম দিন আমাদের মূল উৎসব শুরু হয়। চাকমাদের মতো মারমারাও ‘ফাসং’ নামের হরেক রকম সবজি মিশ্রিত বিশেষ তরকারি রান্না করে থাকে। প্রতিটি বাড়িতে রান্না করা হয় এই বিশেষ তরকারিটি।’
সাংগ্রাই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ জলকেলি বা পানি ছিটানোর উৎসব। প্রবাদ আছে, এর মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে খুঁজে নিতে পারে পছন্দের জীবনসঙ্গীকে। এখন হয়তো এমনটা হয় না। কিন্তু মজাটা রয়ে গেছে ঠিকই।