হারানোর তালিকায় ‘পালকি’
- ফিচার ডেস্ক
হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের প্রাচীন গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের ধারক ‘পালকি’। একসময়ে বিয়ের বর-কণে (দুলহান-দুলহানি) বাহনের অন্যতম মাধ্যম ছিল পালকি। গ্রাম-বাংলায় এখন আর সে বাহনটি দেখা যায় না। এক সময় বাংলার সবুজ শ্যামল মেঠো পথে প্রায়ই চোখে পড়ত পালকি।
পালকির সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের আবেগ গাঁথা এক সম্পর্ক। নরসিংদীর রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল গ্রামের পালকি বাহক কাহার সম্প্রদায়ের হরিশ মণ্ডল, রবি মণ্ডল, হরিজিৎ সিংসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা গ্রামে-গঞ্জে পালকির বেহারা হিসেবে কাজ করতেন। যৌবনে গায়ে শক্তি থাকতে আমরাও এ পেশাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেছি। বর্তমানে পালকির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বহু কষ্টে দিনাতিপাত করছি। এখন পেশা ছেড়ে বৃদ্ধ বয়সে কাঠ মিস্ত্রি হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছি।
পালকির ব্যবহার কখন কীভাবে এদেশে শুরু হয়ে ছিল তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় নি। মোগল ও পাঠান আমলে বাদশাহ, সুলতান, বেগম ও শাহাজাদীরা পালকিতে যাতায়াত করত। দেশি-বিদেশি পরিবাহক ও ঐতিহাসিকদের তথ্য ও গবেষণা থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। ইংরেজ আমলের নীলকররা পালকিতে করে একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করত। আর সে জন্যই পালকি অভিজাত শ্রেণীর বাহন হিসেবে গণ্য করা হত। মোঘল আমলে পালকির কারুকাজ রীতিমত একটা কারু শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছিল। পালকি দেখতে কাঠের নৌকার মতো কাঠামো। দৈর্ঘ্য ৬ ফুট প্রস্থে অর্ধেক। কাঠামোটি লম্বা দু’পাশে বাঁশের সাহায্যে বাধা। উপরে ভেলবেটের কাপড়ে মোড়ানো।
তৎকালীন মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় এবং বাঙালির সংস্কৃতিতে পালকির অবস্থান ছিল সুদৃঢ়। মুসলিম কুলিন সম্প্রদায়ের মেয়েদের পর্দা-পুশিদা রক্ষার জন্য পালকিতে চড়ে বাড়ির বাইরে যেত। আগে বিত্তশালী পরিবারগুলোতে নিজস্ব পালকি ও বেয়ারা থাকত। আর নিম্মবিত্তরা তাদের বৌ-ঝিদের আনা নেয়ার জন্য পালকি ভাড়া নিত। যুগ পাল্টে গেছে রাজা নেই বাদশাহ নেই, তাই পালকি ও বেহারাও নেই।