‘ভাড়া কমবো কি, এমনিতেই তো কম নিই’
- বিশেষ প্রতিনিধি
গতকাল (২৪ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়েছে ডিজেলের নতুন দাম। এতে আগের দামের চেয়ে লিটারপ্রতি ৩ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ডিজেল। কিন্তু তা সত্বেও ভাড়া কমেনি ডিজেল চালিত বাসের। এমনকি ভাড়া কমানোর সম্ভাবনাকেও কার্যত নাকচ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজ (২৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর হানিফ পরিবহনের গাবতলী শাখার কাউন্টারে দায়িত্বরত সঞ্জিব বাবুকে ভাড়া কমানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন, ‘ভাড়া কমবো কি, এমনিতেই তো আমরা কম নিই। নতুন করে আর কি কমবো, ডিজেলে দাম কমায়ছে মাত্র ৩ টাকা। এ দিয়া কি লাভ হইবো?’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বর্তমানে সারাদেশে ৬০ শতাংশ যানবাহন ডিজেল বা অকটেন চালিত। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ প্রায় ৭০–৭৫ শতাংশই জ্বালানি তেলে চলে। অথচ জ্বালানির মূল্য কমানো হলে পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘গাড়ি চলে গ্যাসে, তেলের দাম কমলে আমাদের কি?’
গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ি রুটে চলাচলকারী ২২নং বাসের (সাবেক ৮) চালক আব্দুল হাই বলেন, ‘কিয়ের ভাড়া কমাবো, এটা তো গ্যাসের গাড়ি’।
তেলের দাম বাড়ানোর পর গ্যাস চালিত এ বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে কি–না জানতে চাইলে বলেন, ‘হ্যাঁ, তখন ভাড়া বাড়ানো হয়েছে’। তাহলে এখন কমাবেন কি–না– জানতে চাইলে বলেন, ‘না, ভাড়া কমবো না। ভাড়া বাড়ে, কমে না’।
এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ বাস–ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা সালাউদ্দিনের সঙ্গে।তিনি বলেন, ‘আমরা টিভিতে দেখেছি। এখনো বিষয়টি পুরো জানি না। বাসের ভাড়া কমবে কি–না, সেটা মিটিং করেই জানানো হবে’।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ বাস–ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের মালিক ফারুক তালুকদার সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশের বাইরে যাচ্ছেন বলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শুধু বাস ভাড়া নয়, রাজধানীতে চলাচলকারী লেগুনার ভাড়াও কমেনি।তারা অজুহাত দিচ্ছেন, তাদেরটা গ্যাসের গাড়ি। শ্যামলী থেকে মিরপুর ১ নম্বরে আসতে লেগুনায় নেওয়া হচ্ছে ৮ টাকা। অথচ আগে একই দূরত্বে ভাড়া নেওয়া হতো ৫ টাকা। এভাবে প্রতিটি রুটেই বর্ধিত ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে রাজধানীর ভেতর চলাচলকারী গণপরিবহনে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে বেশি ব্যবহার করা হয় ডিজেল। কিন্তু সেই ডিজেলের দাম কমানো হয়েছে মাত্র ৩ টাকা। একইভাবে কেরোসিনের দাম যেটা সাধারণ মানুষের বেশি প্রয়োজন, তার মূল্য কমানো হয়েছে কম। এতে সাধারণ মানুষের তেমন একটা উপকারে আসবে না।’
মহাসচিব আরও বলেন, ‘গত ৩০ বছরে জ্বালানির মূল্য কমানো হলেও ভাড়া সেভাবে কমেনি। তাছাড়া ভাড়া একটু সমন্বয় করা হলেও মাঠ পর্যায়ে নজরদারীর অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ সালে ২৮ অক্টোবর ডিজেলের মূল্য ৫৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৪৮ টাকা করা হয়। তখন সাত টাকা মূল্য কমায় বাস ভাড়া কমে সাত পয়সা। এরপর ২০০৯ সালের ১২ জানুয়ারি ডিজেলের মূল্য আবার ৪৮ টাকা থেকে কমিয়ে করা হয় ৪৪ টাকা। তখন ভাড়া কমে ৪ টাকা।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি জ্বালানির মূল্য বাড়ায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বাস ভাড়া সমন্বয় করে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়। সরকার নির্ধারত এ ভাড়াতেই এখন দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে।