মে দিবস চাই না, দু’বেলা দু’মুঠো খাবার চাই
- তাজবিদুল ইসলাম
পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। মে দিবস নামে অভিহিত এই দিনটি প্রতি বছর মে মাসের ১ তারিখে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন সমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। আমাদের দেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পহেলা মে জাতীয় ছুটির দিন।
১৮৮৬ সালের এদিনে বুকের রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকেরা। এদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন ফলে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান।
অন্যদিকে হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাধ্য হয় শ্রমিকদের এই ন্যায্য অধিকার মেনে নিতে। পরে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশের শ্রমিকদের অনেকেই এখনও মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জানেন না, জানেনা এর তাৎপর্য ও ইতিহাস। তবে এর ভিতর নিম্ন পেশার শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি। দিবসটি সম্পর্কে বিভিন্ন পেশার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নানা তথ্য, ও উপাত্ত।
শ্রমিক দিবস সম্পর্কে নির্মাণ শ্রমিক মনির জানান, ‘আমার মতো শ্রমিকদের জন্য শ্রমিক দিবস নয়। সারা দিন রশিতে ঝুলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও আমরা ন্যায্য মজুরি পাই না আর মহিলা শ্রমিকরা একই কাজ করেও পায় আরও কম মজুরি। মনির তার হাতের ইশারায় দুরের অফিস আদালত দেখিয়ে আরও বলেন যারা ওই খানে কাজ করে এই দিবসটি হয়তো তাদের জন্য। কেননা তাদের ভাগ্যের উন্নতি হয় কিন্তু হাজারো নির্মাণ শ্রমিক কোন উন্নতি নাই।’
রিক্সা চালক রমিজ উদ্দিনের কাছে শ্রমিক দিবস সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক দিবস কি জানি না, সারা দিনে ভাড়ার রিক্সা চালিয়ে যে টাকা পাই সেখান থেকে আবার মহাজনকেও তার ভাগ দিতে হয়। আর বাকি টাকা দিয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে কোনো রকমে দিন কেটে যায়।’
দিন মজুর খালেক মিয়ার মতে, ‘শ্রমিক দিবস কী আমি জানি না, আমি দিন আনি দিন খাই। মাটি কাটা, ইট ভাঙ্গা, কুলির কাজ যখন যে কাজ পাই তাই করি। তিনি আরও বলেন কোনো কাজ না পেলে মাঝে মাঝে না খেয়েও কাটাতে হয় তাকে।’ তাই তিনি শ্রমিক দিবস চান না দুবেলা দুমুঠো খাবার চান।
দিবসটি নিয়ে গ্লোবাল ওয়াশিং লিমিটেড এর প্রডাকশন অফিসার মুন্না বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শ্রমিক দিবস সেদিনই সার্থক হবে যেদিন প্রতিটি শ্রমিক তাদের ন্যায্য অধিকার বুঝে পাবে। তবে এ ব্যাপারে শ্রমিকদেরও সচেতন থাকতে হবে।’
তবে সব বাঁধা দূর হয়ে সকল শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র ও কর্মজীবন হোক আরও ঝুকিমুক্ত ও নিরাপদ এমনটাই আশা করছেন শ্রমিক সমাজ।