আজ তোমার মন খারাপ…
- নাহিদ সিরাজি নিম্মি
ডিপ্রেশন! আমরা প্রায় সবাই এ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত—যার অর্থ ‘বিষণ্ণতা’। কাউকে চুপচাপ বসে থাকলে দেখলে হয়ত গুণগুণ করে গেয়ে উঠি—‘আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে…তুমি আনমনে বসে আছ…।’ মন খারাপ শুধু মেয়েদেরই হয় না, ছেলেদেরও হয়। তবে মন খারাপ হয়ে থাকা আর ডিপ্রেশনে থাকা কিন্তু এক নয়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষণ্ণতার অনেক পর্যায় রয়েছে। বিষণ্ণতা কখনো রোগ হিসেবে আবার কখনো ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার হিসেবেও মানুষের জীবনে আসতে পারে। কারও সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হলে মনটা হয়তো একটু খারাপ হয়, এটি ডিপ্রেশন। তবে এটি ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার নয়। সাধারণ মন খারাপ আর বিষণ্ণতার মধ্যে একটু পার্থক্য রয়েছে। ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার হলে সব সময় মন খারাপ থাকে। বিষণ্ণতার জন্য ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ব্যাহত হয়। কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। যদি এ সব পরিলক্ষিত হয় তবে তাকে ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার বলা হয়ে থাকে।
বিষণ্ণতা একটি মারাত্মক মানসিক সমস্যা। বর্তমান বিশ্বে এ সমস্যাটি দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিষণ্ণতাকে এর তীব্রতা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে—মৃদু, মাঝারি এবং গুরুতর।
ইদানিং সব বয়সের মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও ব্যাক্তিগত সম্পর্কের মধ্যে ঝগড়া, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া, পরিবারের সাথে মতপার্থক্য ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে তরুণদের মধ্যে এটি ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে বিষণ্ণতা থেকে আত্মহত্যার পথও বেঁছে নিচ্ছেন কেউ কেউ।
এনসাইক্লোপিডিয়া অব সাইকোলজি থেকে জানা যায় বিষণ্ণতার কিছু লক্ষণ। যেমন অস্বাভাবিক রকমের খাদ্যাভ্যাস, পছন্দের জিনিসকে এড়িয়ে চলা, রাগ দেখানো, কম ঘুমানো, ওজনে তারতম্য ইত্যাদি। ওষুধ প্রয়োগে ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে এসব লক্ষণ যদি দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় থাকে তবেই ধরে নেয়া যায় যে তিনি ডিপ্রেশনে রয়েছেন।
এ বিষয়ে আরও জানতে যোগাযোগ করা হয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট বিলকিস খানমের সঙ্গে। তিনি জানান, নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা নিজেকে চিন্তা করতে হবে। আমার নিজের মধ্যে কি ঘটছে তা প্রকৃতভাবে অনুধাবন করতে পারলেই বিষণ্ণতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তবে অবশ্যই একজন পেশাদার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও নিজেকে কিছু কিছু সাহায্য করতে হবে এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। যারা বিষণ্ণতায় ভোগে তাদের মধ্যে অনেক বেশি নেতিবাচক চিন্তা কাজ করে। সব ধরনের নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক চিন্তায় রূপান্তর করতে হবে। জীবনে অনেক না পাওয়ার মাঝেও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাওয়া আছে তা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখা, দৈনন্দিন ব্যায়াম করা এবং সর্বোপরি নিজের দৈনন্দিন কাজে পরিবর্তন এনে আমরা বিষণ্ণতা থেকে দূরে থাকতে পারি।