গরুর গায়ে লেখা ছিল ‘আমি বই পড়ি না’
- জাওয়াদ মো. অর্ণব
ভাবুনতো, শীতের বিকেলে ছাদে কিংবা বারান্দায়, চায়ে চুমুক দিতে দিতে একটা রোমান্টিক উপন্যাস পড়ছেন। কেমন অনুভূত হবে, তা একমাত্র বই প্রেমীরাই ব্যাখ্যা করতে পারবেন। বইপ্রেমী এসব মানুষের জীবনে ‘বইমেলা’ যেন বসন্তে প্রাণের উৎসব। মুক্তির বাতাসে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে ছুটেচলার আনন্দ।
প্রতিবারের মতো এ বছরেও পহেলা ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮’ এর পর্দা উঠেছে। মাতৃভাষার প্রতি বাঙালি সন্তানদের বীরত্ব গাথা আত্মত্যাগ চির অম্লান করে ধরে রাখতেই বইমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।
আজকের এই গ্রন্থমেলার পিছনে রয়েছে বহু বছরের পুরোনো ইতিহাস। সূচনা লগ্নে এই মেলারর পরিধি ছিলো অতি সীমিত পরিসরে। বাংলাদেশে প্রথম গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয় ১৯৬৫ সালে। তৎকালীন বাংলা একাডেমির গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েন উদদীনের হাত ধরে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির নিচতলায় একটি শিশু গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। আর সেটিই বাংলাদেশের প্রথম অনুষ্ঠিত বইমেলা। এরপর ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায় তিনি আবারও একটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। সেই আয়োজনে মেলায় আলোচনা সভার ব্যবস্থা করা হয়। সরদার জয়েন উদদীন অবশ্য সেবার একটি মজার ইঙ্গিতধর্মী তামাশার ব্যবস্থা করেন । মেলার ভেতরে একটি গরু বেঁধে রেখে, তার গায়ে লিখে রাখা হয়, ‘আমি বই পড়ি না’।
এরপর বইমেলার যাত্রা শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রে। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় চটের ওপর বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এই বইগুলো প্রকাশিত হয় ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ থেকে। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন বাংলা একাডেমিরর মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে বইমেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহা পরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন করেন। তবে সে বছর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রদের উপর পুলিশ ট্রাক তুলে দিলে ২ জন ছাত্র নিহত হয়। যার কারণে সে বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয় নি। তবে পরের বছর ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে আবার ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার’ সূচনা হয়।
আশির দশকের পরে মেলার পরিধি, চিত্র এবং ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। দ্রুত বাড়তে থাকে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। ১৯৮৫ সালে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিলো ৮২টি। ১৯৯১ এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯০ আর ১৯৯২ সালে ২৭০টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করে। এরপর ১৯৯৫ সালে ছিলো ৪৬৭টি, ১৯৯৭ সালে ৫২০টি, ২০০৬ সালে ৩১৭টি, ২০০৯ সালে ৩২৬টি এবং ২০১১ সালে মেলায় ৩৭৬ টি প্রতিষ্ঠান এর ৫৫৬টি স্টল বরাদ্দ করা হয়।
এবছর বিগত বছরগুলোর তুলনায় সর্বাধিক সংখ্যক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। মোট ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানের ৭১৯ ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২৪টি প্যাভিলিয়ন এবছর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবং ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিন কর্ণার স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবারের বই মেলায়।