ধানমন্ডি লেকের সৌন্দর্য নষ্ট: নৈপথ্যে অসচেতনতা
- আইরিন আঁচল
রাজধানীতে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার মতো জায়গাগুলোর একটি ধানমন্ডি লেক এলাকা। ইট-কংক্রিটের এই শহরে গাছ ও জলের এমন মেলবন্ধন খুব কমই চোখে পড়ে। কিন্তু অযত্ন, অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে লেক ও লেক সংলগ্ন এলাকা। লেকের ভেতর যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে চিপসের ও সিগারেটের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল ও অন্যান্য আবর্জনা। ফলে বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
দর্শনার্থীরা ঘুরতে এসে হরহামেশা লেকে ফেলছেন অপচনশীল দ্রব্য। চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল ও পলিথিন বা প্লাস্টিকের অংশ ফেলছেন যেখানে সেখানে। ডাস্টবিন থাকলেও সেখানে ময়লা ফেলেন না ঘুরতে আসা লোকজন। এতে করে সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে লেকটি। ফলে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
দেখা যায়, লেকে যাওয়ার পথ ধানমন্ডির ১২ নম্বর সড়কে লেকের পাশেই রয়েছে ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধের কারণে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। লেক এলাকা ধূমপানমুক্ত হলেও অনেকেই সে নিষেধাজ্ঞা মানেন না। সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ ফেলে দেয় লেকের পানিতে। তাছাড়াও লেকের পাড়ে বিশুদ্ধ পানির জন্য স্থাপিত কলে বেশির ভাগ সময় পানি থাকে না। লেকের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছিল বর্গাকৃতির ভাসমান খোলা জায়গা। সেই ভাসমান অংশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্য পাড়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এবং সংযোগ সেতুটি পানির তলায়।
লেকের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, লেকের কিছু অংশের পানি পরিষ্কার থাকলেও অন্য অংশের পানিতে পড়ে আছে গাছের পাতা। নিয়মিত পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তা করা হয় না বলে জানিয়েছেন মাছ শিকার করতে আসা লোকজন। তারা বলছেন, পাতা পঁচে পানিতে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়, যা পানিতে দুর্গন্ধও ছড়ায়। যার প্রভাবে মাছও মরে যায়। ফলে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না বলে লোকজন সেভাবে মাছ শিকার করতে আসছে না। বলা যায়, এতে সরকারের রাজস্ব হ্রাস পাচ্ছে।
মোহনীয় সৌন্দর্যের আধার রাজধানীর ধানমন্ডি লেক। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিনোদনপ্রেমীরা অবসর সময় কাটাতে এখানে ছুটে আসেন। ইট পাথরের এই শহরের অনেকে একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য আসেন এখানে। নাগরিক অসচেতনতার কারণে দিন দিন এ লেকের পানি টলটলে স্বচ্ছ এবং পরিবেশে সৌন্দর্য হারাচ্ছে। ফলে বদলে যেতে শুরু করেছে লেকের সার্বিক চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিত্তবিনোদনের জন্য প্রায় ৫৪.৬০ একর নয়নাভিরাম সুবিশাল লেকসহ সর্বমোট ৮৫.৬০ একর এলাকা নিয়ে গঠিত ধানমন্ডি লেক, যা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আয় থেকে ব্যয় নির্বাহ বিবেচনায় সমগ্র লেকটিকে ৭টি সেক্টরে বিভক্ত করে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুবিধা প্রদান করে ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।