একাদশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
- মো. সেলিম ভূঁইয়া
এক দশক পেরিয়ে একাদশে পদার্পণ করলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। একটি পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেসব শর্তাবলি পূরণ করা একান্ত জরুরি, সেগুলোর বাস্তবায়নের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আগামী দিনে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। জন্মলগ্ন থেকে সমস্যাপীড়িত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্রমান্বয়ে একাডেমিক, অবকাঠামো এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং উন্নয়নের ধারায় যুক্ত করার কাজে নিয়োজিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সাধুবাদ জানাই।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বড় সমস্যা হচ্ছে জায়গার স্বল্পতা। তাছাড়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দের জন্য আবাসনেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে নেয়া হয়েছে বেশকিছু বড় প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের বিদ্যমান ভবন ভেঙে ২০ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। নতুন একাডেমিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আবাসন সংকট নিরসনকল্পে কেরানীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে হল নির্মাণ করা হবে। হল নির্মাণ কার্যক্রম আগামী জানুয়ারি, ২০১৭ থেকে শুরু হবার কথা। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতেও নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ। এজন্য প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কেরানীগঞ্জে আবাসন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। সবার জন্য থাকবে যাতায়াতের সুব্যবস্থা।
ক্যাম্পাসের আশেপাশে ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণের জন্য জায়গা এবং পরিবেশ নেই বিধায় কেরানীগঞ্জে নিজস্ব জায়গায় এক হাজার আসনবিশিষ্ট ছাত্রদের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি হল নির্মাণ করা হবে। হলের নামকরণ বিষয়ে ইতোমধ্যেই সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেজন্য কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত জেলখানার বিপরীত দিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশেই প্রায় ২৫ বিঘা জমি এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ক্রয় করা হয়েছে। এই জায়গায় শিক্ষক, শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া, বাংলাবাজারে বেগম ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব হল নামে ছাত্রীদের জন্য ২০ তলাবিশিষ্ট একটি হলের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকসহ অন্যান্য সমস্যা নিরসনকল্পে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের ইতোমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ প্রদান করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় বিষয় হলো একাডেমিক ডেভেলপমেন্ট, যা ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় করতে অনেকটা সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা ৫৭০ জন। সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এখানে আসন করে নিচ্ছেন। এদিক থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সবচেয়ে বড় অর্জন হলো ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত করা। ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতিসহ যে ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল তার উত্তরণ ঘটেছে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি খুবই কার্যকর, তার প্রমাণ মিলছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকটি ব্যাচ বের হয়ে চাকরি করছে। সমপ্রতি অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরা সকলের নজর কেড়েছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধা এবং গবেষণার অগ্রগতি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন সাতটি বিভাগ খোলা হয়েছে। এছাড়া পুরানো ঢাকার সাংস্কৃতিক বিকাশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। আগামী দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় আরও এগিয়ে যাবে—এই প্রত্যাশাই করি।