ভর্তি পরীক্ষা : বিড়ম্বনা চলতেই থাকবে?
- মো. মাসুদ রানা
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পর পরই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষা নামক একটি কঠিন যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়। ভর্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করতে হয়। গত তিন বছর আগে, সবার মতো আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম। যথাসময়ে একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য আবেদন করলাম। কয়েকদিন পর ফোনে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে জানতে পারলাম—আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অযোগ্য, যদিও আমার এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ছিল। সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল এই ভেবে যে, কেন ওখানে আবেদন করলাম? এই টাকা দিয়ে অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারতাম।
সেদিন শুধু আমার একার খারাপ লাগেনি, হাজার হাজার ভর্তি প্রার্থীর খারাপ লেগেছিল। এই রকম সিলেকশন পদ্ধতি বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, বাকৃবিসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করে থাকে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে মাত্র অল্প কয়েক হাজার। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি এটা কী রকমের অবিচার তা আমার বোধগম্যের বাইরে। আপনারা যদি সবাইকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে না দিবেন তবে কেন তাদের সবার নিকট থেকে টাকা নেন? কেন সেই টাকা পরীক্ষায় বসতে না পারা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেন না? এটা কি তাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করা হয় না? আমার মতে, এই সিলেকশন প্রক্রিয়ার পর ভর্তিপরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করালে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে হারায়। কারণ, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদর মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয় না, এটা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায়। বর্তমানে দেশের পাবলিক পরীক্ষাগুলো সব শিক্ষা বোর্ডেই সমান পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় না। সব শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার খাতাগুলোও একইভাবে দেখা হয় না। তা ছাড়া প্রশ্নফাঁসের বিষয়টিও মাঝে মাঝে ঘটে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কী এমন সমস্যা হবে যদি আবেদনকৃত সকল প্রার্থীকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়? আর যদি এটা সম্ভব না হয় তবে আপনাদের উচিত, যেসব প্রার্থী পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়নি তাদের সবাইকে আবেদন ফি’র টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অথবা আবেদনকারীর ঠিকানায় ফেরত দেওয়া। ইতোমধ্যে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এরকম একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। তারা শুধু সিলেকশন বাবদ যত টাকা খরচ হয়েছে তা কেটে নিয়ে বাকি টাকা আবেদনকারীর ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষার আবেদন ফি অনেক বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাংলাদেশে এমন কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই যেখানে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ৫০০ টাকার কম। এবার শাবিপ্রবিতে ভর্তিপরীক্ষার আবেদন ফি ১০০০ ও ১২০০ টাকা করা হয়েছিল (অবশ্য পরবর্তীকালে আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকার পরিমাণ কমিয়েছে)।
আমার জানা মতে, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা বাবদ যে পরিমাণ টাকা আয় করে তার এক-তৃতীয়াংশও ভর্তিপরীক্ষার পিছনে ব্যয় হয় না। ভর্তিপরীক্ষার সময় একজন প্রার্থীকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটতে হয়। আর এসব ছুটোছুটি করার জন্য যাতায়াত বাবদ অনেক টাকা ব্যয় হয়। একদিকে আবেদন ফি’র পরিমাণ অনেক বেশি অন্যদিকে যাতায়াত বাবদ খরচ, দুটো মিলে অনেক বেশি টাকা চলে যায়—যা নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। এই সমস্যার অত্যন্ত কার্যকর সমাধান হতে পারে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা। এ বিষয়ে ইউজিসি’র মাননীয় চেয়ারম্যানসহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্যের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়