কোন দেশে পড়াশুনার খরচ কত?
- নিউজ ডেস্ক
পৃথিবীর অনেক দেশেই স্কুলে নতুন সেশনের ক্লাস শুরু হয় সেপ্টেম্বরে। আবার কোনো কোনো দেশে সেশন শুরু হয় জানুয়ারি মাসে। একেক দেশে স্কুলের একক নিয়ম-কানুন। সারা বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে অনেক পার্থক্য। বিভিন্ন দেশের কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়ার সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা পরিলক্ষিত হয় শিক্ষার পেছনে পরিবারের খরচের ক্ষেত্রে।
যুক্তরাষ্ট্রে কিন্ডারগার্টেন থেকে মাধ্যমিক স্কুলের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে গড়ে একটি পরিবারের খরচ হয় ৬৮৫ ডলার। গত এক যুগে খরচ দ্বিগুণের মতো বেড়েছে। এ হিসেবে সব খরচ এক সাথে যোগ দিলে যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৮ শিক্ষা বছরে অভিভাবকদের মোট খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে ২ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কম্পিউটারের পেছনে। প্রত্যেক পরিবারে এ খরচ ২৯৯ ডলার। তারপরে রয়েছে স্কুলের ইউনিফর্ম, পোশাক বাবদ খরচ হয় ২৮৬ ডলার। ট্যাবলেট ও ক্যালকুলেটরের মতো ইলকেট্রনিক যন্ত্রপাতি কিনতে লাগে ২৭১ ডলার। আর সবচেয়ে কম অর্থ খরচ হয় যেসব জিনিসের পেছনে তার মধ্যে রয়েছে ফাইল, ফোল্ডার, বই, হাইলাইটারসহ অন্যান্য সামগ্রী। এ সব জিনিসের পেছনে খরচ গড়ে ১১২ ডলার।
সন্তানের লেখাপড়ায় কত খরচ করতে হবে তা নির্ভর করছে কোন দেশে পড়াচ্ছেন তার ওপর। দেশ ভেদে এ পার্থক্য এক লাখ ডলারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। স্কুলের বেতন, বইপত্র কেনা, স্কুলে যাওয়া আসার খরচ, থাকা-খাওয়া সব একসাথে যোগ করলে হংকং-এ প্রাথমিক স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। অর্থাত্ স্কুলে লেখাপড়ার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর হংকং। এবং অন্যান্য দেশের খরচের তুলনায় এটা খুব বেশি। হংকং-এ বৃত্তি, ঋণ, রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এ সব বাদ দিলেও একজন শিক্ষার্থীর পেছনে অভিভাবকদের তাদের নিজেদের পকেট থেকে খরচ করতে হয় আরো ১ লাখ ৩১ হাজার ১৬১ ডলার।
এরপরেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেখানে অভিভাবকদের খরচ হয় ৯৯ হাজার ডলার। সিঙ্গাপুরে ৭১ হাজার ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে ৫৮ হাজার ডলার। কিন্তু ফ্রান্সে একটি পরিবারকে তাদের সন্তানের শিক্ষা জীবনের পেছনে খরচ করতে হয় ১৬ হাজার ডলার।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৩টি উন্নত দেশের মধ্যে রাশিয়ায় শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে কম সময় স্কুলে কাটাতে হয়। এক বছরে তারা স্কুলে থাকে গড়ে ৫শ ঘণ্টার মতো। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হিসেবে এ সময় গড়ে ৮শ ঘণ্টা। তার মানে রাশিয়ায় একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন গড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো স্কুলে কাটায়। স্কুল খোলা থাকে আট মাস। আবার স্কুলে সময় কাটানোর জন্য রাশিয়ার ছেলে-মেয়েরা যে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে বিষয়টি তেমন নয়। রাশিয়ায় সাক্ষরতার হার ১০০%।
রাশিয়ার পরেই রয়েছে ডেনমার্কের অবস্থান। ডেনমার্কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বছরে গড়ে এক হাজার ঘণ্টা ক্লাসে কাটাতে হয়। অর্থাত্ রাশিয়ার শিক্ষার্থীদের তুলনায় তাদের দুই মাস বেশি ক্লাস করতে হয়। ডেনমার্কে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন লম্বা সময় ধরে স্কুলে থাকতে হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা তাদের সদস্য দেশগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে যে জরিপ পরিচালনা করে থাকে তাতে দেখা যায় ডেনমার্কের অবস্থান তালিকার শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি দেশের ভেতরে। তার অর্থ কেউ কেউ এভাবেও ব্যাখ্যা করতে পারেন যে, বেশি সময় ধরে স্কুলে থাকলে তার একটা ভালো দিকও থাকে।