বগাবিল থেকে হাতিরঝিল
- কুদরত-ই-খুদা হৃদয়
জনবহুল এই ঢাকা শহরে একটু খোলামেলা জায়গায় বসে শরীরে মুক্ত হাওয়া লাগানোর কথাটি ভাবলেই ঢাকাবাসীর পছন্দের তালিকার প্রথম সারিতেই হাতিরঝিলের নাম চলে আসে। আবার ঢাকার বাইরে থেকে স্বল্প সময় নিয়ে ঢাকা শহর বিচরণ করতে আসা মানুষের তালিকাতেও স্থান পায় হাতিরঝিল। পছন্দ করবে নাই বা কেন! একসময় খাল-বিল, নদী-নালায় ভরপুর ছিল যে দেশ এবং জলপথই ছিল যার প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম, সেই দেশে এখন নদী-নালাগুলো প্রায় প্রাণহীন এবং খাল-বিলগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। কিন্তু এসবের প্রতি প্রেম বাঙালি হৃদয়ে এখনো অক্ষুন্ন। প্রতিদিন হাজারো মানুষ হাতিরঝিলে ঘুরতে এলেও এর ইতিহাস সম্বন্ধে অনেকেরই এখনো জানা নেই।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসময় হাতিরঝিলের নাম হাতিরঝিল ছিল না। এর নাম ছিল বগাবিল। কোথাও কোথাও বগা হচ্ছে বক এর আঞ্চলিক নাম। তখনকার সময়ে এই বিল জুড়ে ছিল সাদা বকের মেলা। হাজার হাজার বকের পদচারণায় সাদা হয়ে উঠতো এই বিল। এই থেকে সেই বিলের নাম হয়ে ওঠে বগাবিল। আ্জকের ধানমন্ডিকে তখন বলা হতো উত্তরের জাঁতা বা উত্তরের জঙ্গল। আর এই জঙ্গল জুড়ে ছিল শেয়ালের আনাগোনা। ব্রিটিশ রাজার ধারাবাহিকতায় ভাওয়াল রাজার হাতিশালা ছিল আজকের পিলখানা। সেখানে রাজার পোষা হাতি রাখা হতো এবং হাতিদের দেখাশোনা করার জন্য মাহুতরা থাকতো। একদিন সেখান থেকে কিছু হাতি দলছুট হয়ে পূর্ব দিকে যাত্রা শুরু করে এবং বিলে চলে আসে। বিলের উষ্ণ পানি হাতিগুলোর মনোরঞ্জন করে। এদিকে মাহুতরা হাতিগুলোকে খুঁজতে খুঁজতে একসময় বিলের পানিতে আবিষ্কার করেন। বিলের পানি খুব স্বচ্ছ থাকায় মাহুতরা হাতিগুলোকে সেই বিলেই নিয়মিত গোসল করানোর সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে বগাবিলের নাম পরিবর্তিত হয়ে হাতির বিল হয়। মজার ব্যাপার হলো হাতিগুলোকে যে পথ দিয়ে বিলে নিয়ে যাওয়া হতো সেসব পথের নামের সাথেও পরে হাতি নামটি জুড়ে যায়। এর উদাহরণ হচ্ছে এলিফ্যান্ট রোড এবং হাতিরপুল। কালের বিবর্তনে হাতির বিলের নাম হয় হাতিরঝিল।
পরবর্তিতে ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান এবং ঢাকা নগরীর পূর্ব-পশ্চিম সংযোগের লক্ষ্যে ২০০৮-২০১২ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ নিজেস্ব অর্থায়নে, এক হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আধুনিক হাতিরঝিল বাস্তবায়ন করা হয়।