পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ‘বাকরখানি’
- জাকারিয়া হোসাইন
পুরান ঢাকা শব্দটা কানে আসলেই চোখে ভেসে ওঠে অনেক মুখরোচক খাবার। কেননা, সেই খাবারগুলোই অনেকাংশ পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ধারণ করে থাকে। যদিও যান্ত্রিক সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে খাদ্য বিজ্ঞানের ও অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। খাদ্য তালিকায় যোগ হয়েছে বার্গার, স্যান্ডউইচ, পিৎজ্জাসহ বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড।
তবে পুরান ঢাকার তিন শতাব্দীর ঐতিহ্যের ধারক বাকরখানি রয়েছে এখনও চাহিদার শীর্ষে। দিন দিন বাকরখানির জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত পুরান ঢাকার সব মানুষের সকালের নাস্তায় থাকে বাকরখানি। চায়ের সাথে বাকরখানি দিয়েই দিন শুরু হয় পুরান ঢাকাবাসীর। এছাড়া বাড়িতে মেহমান এলে চায়ের সাথে বাকরখানি দিয়ে আপ্যায়নের রেওয়াজ এখনও প্রচলিত।
বাকখানি হল ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি জাতীয় খাবাব। ময়দার খামির থেকে রুটি বানিয়ে তা মচমচে বা খাস্তা করে ভেজে বাকরখানি তৈরি করা হয়। সাধারণত বাকরখানিতে ময়দার সাথে স্বাদবর্ধক আর কিছুই দেওয়া হয় না। তবে, অনেক সময় চিনি দেওয়া বাকরখানিও পাওয়া যায়।
পুরান ঢাকায় ছোট বড় বিভিন্ন আকারের বাকরখানি পাওয়া যায়। যার মূল্য প্রতি পিস ৫-১০ টাকা। বাকরখানি ঢাকার কিছু কিছু অঞ্চেলে ‘শুখা’ নামেও পরিচিত। ঢাকায় সর্বপ্রথম বাকরখানির দোকান গড়ে ওঠে লালবাগ কেল্লার কাছে। বর্তমানে লালবাগ, চকবাজার, বংশাল, ইসলামবাগ, হাজারীবাগ, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়াসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাকরখানির দোকান চোখে পড়ে। এছাড়াও বাকরখানি সাদা পলিথিনের প্যাকেটে ভরে ধানমন্ডি, উত্তরা, বনানী, গুলশানসহ রাজধানীর দোকানে ও সুপার শপগুলোতে পাওয়া যায়।
বাকরখানির জনপ্রিয়তা বর্তমানে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। বাকরখানি নিয়মিতভাবে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। পুরান ঢাকা থেকেই বাকরখানি ভারত, পাকিস্থান, যুক্তরাজ্য, নেপাল, সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্য সহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। যা প্রবাসী বাঙ্গালীদের চাহিদা পূরণ করছে। সময়ের সাথে সাথে বাকরখানির জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাকরখানির গুণগতমান ঠিক রেখে ঐতিহ্যকে ধারণ করুক এমনটাই আশা পুরান ঢাকার সকলের।