গল্পটা ব্যস্ততাময় বৃদ্ধ শহরের
- মেহেদী হাসান
পুরান ঢাকা, ঢাকা বাসিদের অত্যন্ত পরিচিত একটি অঞ্চল। বলা হয়ে থাকে শুধুমাত্র ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে পুরান ঢাকা।
নদীমাতৃক এ দেশে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠে একটি শহর ঢাকা। কালের বিবর্তনে উন্নতির ছোঁয়ায় শহরের পরিধি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ঢাকা মহানগরীর রূপ পেলে আদি শহরটির নানা শিল্পের শৈল্পিক স্থাপনা চিহ্ন নিয়ে টিকে থাকে। হ্যাঁ এটিই পুরান ঢাকা । এ যেন শহরের ভিতরে আরেক শহর।
বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাধারণ বাঙ্গালি সংস্কৃতি থেকে পুরান ঢাকার সংস্কৃতি অনেকটাই ভিন্নতর। এমনকি ভাষাগত পার্থক্য লক্ষণীয়। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও এ পুরান ঢাকাবাসি আগলে রেখেছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। সারা বছরজুড়েই কোন না কোন উৎসবে মেতে থাকে তারা।
পুরান ঢাকা যেতে প্রথমেই চোখে পড়ে সব রাস্তায় যাত্রী বহনে ব্যস্ত ঘোড়ার গাড়ি। টগবগিয়ে বহন করছে শত শত বছরের ঐতিহ্য । রাস্তার দু পাশে গড়ে ওঠা ছোটবড় বিভিন্ন দোকানে সাজানো খাবারের পসরা দেখেই বোঝা যায় পুরান ঢাকার বাসিন্দারা কতটা ভোজন প্রিয়। খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টিক্কা, দই-বড়া, শিক কাবাব, বটি কাবাব, নার্গিস কাবাব, শাম্মি কাবাব, কাঠি কাবাব, জালি কাবাব, মুরগি মসাললাম খাসির পায়া, কাচ্চি বিরিয়ানি, লাক্কি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, নান রুটি, বাখরখানি, নিহারি, বোরহানি, লাবান সহ ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের অসংখ্য মুখরোচক খাবার। পুরান ঢাকা অন্যান্য খাবারের পাশা-পাশি বিরিয়ানির প্রশংসা পুরো রাজধানীবাসির মুখে মুখে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা বেশ তৃপ্তির সাথে স্বাদ গ্রহণ করে ঐতিহ্যবাহী নানা খাবার খেয়ে।
একেকটি উৎসবে পুরান ঢাকার ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখা যায়। চৈত্র সংক্রান্তি, সাকরাইন, দোল পূর্ণিমা, হোলি উৎসব, নববর্ষ পালন করে থাকে তারা। এছাড়াও ধর্মীয় দিবসকে কেন্দ্র করে উৎসব-পার্বন উদযাপন করে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। শুধু উৎসব আর মুখরোচক খাবার নয়, পুরান ঢাকায় রয়েছে নজর কাড়া স্থাপনা। ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। মোঘল আমলের লালবাগ কেল্লা, জিনজিরা প্রাসাদ, আহসান মঞ্জিল, বড়কাটরা, ছোটকাটরা, রূপলাল হাউজ, লালকুঠি, তারা মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, আর্মেনীয় গির্জা অন্যতম। ইতিহাসের স্বাক্ষী প্রচীন স্থাপনাগুলি দেখতে আসে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা।
বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে সমৃদ্ধ বলধা গার্ডেনটিও পুরান ঢাকারই অন্তর্ভূক্ত। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বে অবস্থিত বাহাদুর শাহ পার্কটিও ব্যস্ত থাকে বছরের পর বছর।
এ যেন এক ব্যস্ততাময় বৃদ্ধ শহর।