জাদুঘরের ইতিহাস, ইতিহাসের জাদুঘর
- আফরিদা ইফরাত হিমিকা
জাদুঘর শব্দটি শুনলেই আমাদের মনের ভেতর ভেসে ওঠে ঐতিহ্যপূর্ণ কিছু পুরোনো সামগ্রী বা ঐতিহাসিক কোনো রাজা বা বিশিষ্ট ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ছবি। কিন্তু জাদুঘর কি আসলেই কিছু পুরোনো জিনিস সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়?
আসলে জাদুঘর হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেখানে একটি জাতীর অতীতের গৌরবান্বিত ইতিহাস সংগ্রহ করে রাখা হয়। অথচ কেউ কী কখনও ভেবে দেখেছি যে এই জাদুঘরের ইতিহাসটি কী?
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জাদুঘর হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। আগে কিন্তু এটির নাম বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ছিলো না, ছিলো ঢাকা জাদুঘর।
সময়টা ইংরেজ ঔপনিবেশিক সময়। শুনে মনেই হতে পারে, তাহলে কি বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর ইংরেজদের তৈরি?
সত্যিই তাই। এদেশে জাদুঘরের প্রচলন প্রথম ইংরেজরাই করেন।
তৎকালীন সময়ে বাংলার গভর্নর ছিলেন লর্ড কারমাইকেল। জনগণের চাহিদা বিবেচনা করে তিনি একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবেন। কিন্তু তাতে বাধ সাধে ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ। ১৯১২ সালের দিকে তিনি দেশের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন যারা বেশ কিছু পুরোনো সামগ্রীর প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন।
প্রদর্শনীটি দেখে লর্ড কারমাইকেল মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ঢাকায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি ২০০০ রুপি দান করেন জাদুঘরটির কাজ শুরু করার জন্য।
জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করতে যে দুজন মানুষ সবচেয়ে বেশী অবদান রেখেছিলেন তারা হলেন, এম বনহ্যাম কারটার এবং স্যার নিকোলাস ডড বেটসন বেল।১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট পুরাতন সচিবালয়ের একটি কক্ষ নিয়ে প্রথম ঢাকা জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। ১৯১৪ সালে প্রথম ৩৭৯টি নিদর্শন এবং ৩০জন কর্মচারী নিয়ে শুরু হয় জাদুঘরের প্রদর্শনী। একই সালে বাবু নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রথম কিউরেটর হিসেবে নিযুক্ত হন।
নলিনীকান্ত ভট্টশালী ছিলেন বিচক্ষণ ব্যক্তি। তিনি নিজে জাদুঘরের তদারকি করতেন। একদিন তার মনে হলো জাদুঘরের সংগ্রহ বাড়ানো উচিত। আস্তে আস্তে জাদুঘরের সংগ্রহের সংখ্যা বাড়তে শুরু হলো। একই ভবনের আরো দুইটি কক্ষ জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হলো।
সংগ্রহের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে একসময় যখন তিনটে কক্ষেও জায়গা হলো না, তখন সেখান থেকে জাদুঘরটি সরিয়ে নেওয়া হলো নিমতলীতে নায়েব নাজিমের বারোদূয়ারী ভবনে। ১৯৪৭ সালে নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মৃত্যুর পর চারবছর জাদুঘরটি কিউরেটরবিহীন থাকে। যার ফলে পরবর্তীতে ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৬২ সাল অবদি জাদুঘরটি চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে। এসময় এনামুল হক নামে একজন সহকারী কিউরেটর হিসেবে নিয়োগ পান এবং পরবর্তীতে তিনি পদোন্নতি পেয়ে কিউরেটর হন। এসময় দেশের বিভিন্ন ভাগ থেকে রাজা এবং জমিদারদের পক্ষ থেকে বহু মূল্যবান নিদর্শন জাদুঘরে আনা হয়।
অবশেষে ১৯৮৩ সালে জাদুঘরটি শাহবাগে স্থানান্তর করা হয়। আট একর জায়গা নিয়ে জাদুঘরটি স্থাপিত হয়।
জাদুঘরের প্রথম সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এফ. সি ফ্রেঞ্চ আইসিএস এবং সম্পাদক ছিলেন এইচই স্ট্যাপলটন।
জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যারা সেসময় সবচেয়ে বেশী ভুমিকা রেখেছেন তারা হলেন, স্ট্যাপলটন, সত্যেন্দ্রনাথ ভদ্র, সাইদ আওলাদ হাসান, বি. কে দাস, খাজা মুহাম্মদ ইউসুফ, হাকিম হাবিবুর রহমান, নলিনীকান্ত ভট্টশালী, জে. টি রাংকিন, এ. এইচ ক্লেটন সৈয়দ মুহাম্মদ তৈফুর প্রমুখ।