ব্যাচেলরের সোনার হরিণ
- কুদরত-ই-খুদা হৃদয়
রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া নেওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার। আর যদি তা হয় ব্যাচেলর, তবে তা হয়ে ওঠে দুষ্প্রাপ্য। পছন্দসই বাড়ি ভাড়া পেতে হলে হয় হতে হবে পরিবার, না হয় গুণতে হবে মোটা অঙ্কের ভাড়া। আর যদি ভাগ্যক্রমে যুতসই ভাড়া বাড়ি মিলেও যায়, তাতেও থাকে নানা বিধিনিষেধ।
নগরজুড়ে গড়ে উঠছে আধুনিক সভ্যতা। নানা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ উন্নত কর্মসংস্থানগুলোও গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে। এসকল প্রতিষ্ঠানজুড়ে অধ্যায়নরত এবং কর্মরত আছে অসংখ্য ব্যাচেলর। নগরীতে অধ্যায়ন বা কর্ম করতে গেলে থাকতেও তো হবে সেই নগরীতেই। কিন্তু বাড়ি ভাড়া পেতে যদি হতে হয় নাজেহাল, তবে কি করে চলবে!
ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া পাওয়াটা আগে থেকে কঠিন হলেও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাও এর জন্য ভীষণভাবে দায়ী। গুলশানের হলি আর্টিজান, শোলাকিয়ায় হামলার পর বাড়িওয়ালাকে গ্রেপ্তারের মতো ঘটনাগুলো ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দিতে বাড়িওয়ালাদের মনে ভীতির সৃষ্টি করে। এছাড়া বিভিন্ন বাড়িওয়ালাদের মতে, ব্যাচেলরদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ একটু কম থাকে। এছাড়া ব্যাচেলরদের ভাড়া দিলে অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা আপত্তি করেন। তবে কোন কোন ভারাটিয়া আবার ভাড়ার টাকার চাপ কিছুটা কমাতে তাদের ভাড়াকৃত মূল বাড়ির একটি নির্দিষ্ট কক্ষ সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিয়ে থাকেন। তবে সেটাও আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে থাকে ছোট পরিবারের জন্য এবং খুব কমক্ষেত্রে ব্যাচেলরদের জন্য।
ঢাকা শহরে একজন ব্যাচেলরের ভাড়া বাড়ি খুঁজে পেতে খুব স্বভাবত এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যায়। আবার যদিও বা বাড়ি মিলে যায়, সেটাও হয় ব্যয়বহুল। যেখানে একটি ফ্যামিলি বাড়ি ভাড়া পড়ে ১৫-১৭ হাজার টাকা, সেখানে সেই বাড়ির ভাড়া ব্যাচেলরদের জন্য পড়ে ২০-২২ হাজার টাকা। আল-আমিন শেখ (চাকুরীজীবি ব্যাচেলর) বলেন, ‘সকল ব্যাচেলর একরকম নয়। তবুও ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালারা সকলকে এক পাল্লাতে মাপতেই পছনদ করেন।’ তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান একটি পত্রিকাকে জানান, ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের কোন বিধিনিষেধ নেই।
মানসম্মত বাড়ি তো ভাড়া বেশি, সাধ্যমতো ভাড়া তো মানহীন বাড়ি, আর এই দুটো ঠিক থাকলেও সাথে ফ্রী থাকে বাড়িওয়ালার নানা রকম শর্তাবলী। ফলে অনেকের বেছে নিতে হয় মেস বা হোস্টেল। এরকম অবস্থায় রাজধানীতে একজন ব্যাচেলরের মনমতো ভাড়া বাড়ি পাওয়া অনেকটা সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতো।