একটি ফেসবুক পোস্ট ও একজন মোহাম্মদ আলী
- গাজী আনিস
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দুই বছর পরিবার ছাড়া ছিলেন মোহাম্মদ আলী (২৯)। রংপুর জেলার কোতয়ালী থানা থেকে এসেছিলেন সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানায়। এরই মধ্যে অনাহারে-অর্ধাহারে কেটে গেছে দুবছর। পরিবার যখন তাদের সন্তানকে কাছে পাবার আশা প্রায় ছেড়ে দিলেন, সেই সময় একটি ফেসবুক পোস্ট সন্ধান দিলো সন্তানের।
গত ১ এপ্রিল গাজী আনিস নামের একটি ফেসবুক আইডিতে মোহাম্মদ আলীর ছবি সম্বলিত একটি পোস্টে লেখা হয়- ‘সমাজের ভাষ্য মতে তিনি ‘পাগল’।বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার সোনারমোড় বাজারে অবস্থান করছেন। শ্যামনগরের বিভিন্ন এরিয়ায় ঘোরাঘুরি করেন তিনি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সোনারমোড় বাজারে দেখা যায়। বাড়ি রংপুরে, স্বজনদের কাছে ফিরতে চান। ক্রিকেট খেলা ভালো বোঝেন। প্লেয়ারদের নামও জানেন। পড়তে পারেন। তার পরিবারের সন্ধান দিন। তার ভাষ্য মতে নাম ঠিকানা- নামঃ মোহাম্মদ আলি, বাবার নাম কামরুদ্দিন ওরফে টেনিয়া ভাই। গ্রাম- বাহার কাছনা, বাংকিটারি, ৩ নং তপোধনী ইউনিয়ন, হারাগাছা, সিগারেট কোম্পানি রোড, কোতয়ালী, রংপুর। পৌরসভা থেকে ২ কিলোমিটার পূর্বে।
তারা ৩ ভাই দুই বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি বড়। আর তার বড় বোনের নাম-ইয়াসমিন আরা বেবি, দুলাভাইয়ের নাম শাহাজান মিয়া। ছোট ভাই একজন কলেজে পড়ে, অপরজন মিস্ত্রির কাজ করেন। ১ বছর ৬-৭ মাস ধরে তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর আছেন।’
যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া হয় স্থানীয় ইব্রাহীম খলিল নামের এক তরুণের। পোস্টটি দ্রুতই ফেসবুকে ছড়িয়ে যায়। স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ আকারে ছাপা হয়। ফেসবুকে পোস্টটি পড়েন শিক্ষামন্ত্রণালয়ে কর্মরত আব্দুর রহিম নামের সাতক্ষীরার এক বাসিন্দা। তিনি তার সহকর্মীকে ফেসবুক পোস্টটি দেখান। ওই সহকর্মীর বাড়ি রংপুর। তিনি ছেলেটিকে দেখে চিনতে পারেন এবং ফেসবুক পোস্টে দেয়া নাম্বারে যোগাযোগ করেন। বার্তাটি মোহাম্মদ আলীর পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন।
মোহাম্মদ আলীর পরিবার ইব্রাহীম খলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা তাদের সন্তানকে বাড়িতে নিয়ে যাবার কথা বলেন। তবে ওই মুহূর্তে মোহাম্মদ আলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এসময় ইব্রাহীম খলিলকে সহযোগিতায় জন্য এগিয়ে আসেন সঞ্জয় সরকার, মোঃ সাইফুল ইসলাম দোলন, মুরশিদ আলম, মোঃ রবিউল ইসলাম(বাবু), মোঃ রেজাউল করিম, মোঃ আশরাফুল ইসলাম, মারুফ হোসেন (মিলন) নামের বেশ কয়েকজন স্থানীয় তরুণ।
৫ দিন খোঁজাখুঁজির পর গত ৭ এপ্রিল শ্যামনগরের নওয়াবেঁকি এলাকা থেকে মোহাম্মদ আলীকে খুঁজে পান তারা। সন্তানের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে তার পরিবার। সন্তানকে দেখে চোখের পানি সামাল দিতে পরেননি মা। ৯ এপ্রিল মোহাম্মদ আলীর বাবা ও বড় ভাই শ্যামনগর পৌঁছান। সন্তানকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে নেন বাবা। কান্নায় ভেঙে পড়েন বড় ভাই। ১০ এপ্রিল বুধবার দুপুরে রংপুরের উদ্দেশে রওয়ানা দেন তারা।
ছেলেকে কাছে পেয়ে মোহাম্মদ আলীর বাবা কামরুদ্দিন বলেন, ‘দুবছর আগে ছেলেটা হারিয়ে যায়। কতো খোঁজাখুঁজি করেছি কিন্তু পাইনি। আমরা ওর আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। যখন শুনলাম আমার সন্তানকে পাওয়া গেছে বাড়ির সবাই আনন্দে আত্মহারা। আজ যখন নিজ চোখে দেখলাম আমার সন্তান ভালো আছে তখন আল্লাহকে শুকরিয়া জানিয়েছি।