বিলুপ্তির পথে তামা-কাসার ঐতিহ্য
- আবু রিফাত জাহান
ঢাকার ধামরাইয়ের তামা-কাসার তৈরি হস্তশিল্প প্রায় দুইশ বছরের পুরনো। কিন্তু প্রাচীন এই শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের কদর যেন প্লাস্টিক আর এলুমিনিয়ামের যুগে ম্লান হয়ে গেছে। সুলভমূল্য আর সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ এখন প্লাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্রের দিকে ঝুঁকছে বেশি। কিন্তু খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন সাধারণ মানুষ চিন্তা করতো স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে তামা, কাসা বা পিতলের তৈরি সরঞ্জামাদি ও তৈজসপত্রের কোনো তুলনা নেই। দেশে ও দেশের বাইরেও এর সুনাম ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি এখনো দেশের বাইরে থেকে মানুষ ধামরাই আসে এই সকল তামা কাসার তৈজসপত্রের দোকানে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এই শিল্পের কারখানা যা মাত্র ২০ থেকে ৩০ বছর আগেও ধামরাইতে ছিল প্রায় ৩ শতাধিক, তা এখন মাত্র ৪-৫টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন কেবলই তা সৌন্দর্যবর্ধন আর বিলাসিতা ছাড়া যেন আর কিছু নয়।
পুরান ঢাকা থেকে আসা ধামরাই মেটাল আন্ড হ্যান্ডিক্রাফট দোকানের এক ক্রেতার মুখে শোনা যায়, তামা কাসার জিনিসপত্র একসময় তারা কিভাবে ব্যবহার করতো, আর এখন তা ঘরে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কিনতে হচ্ছে। মূলত কিছুদিন পর এগুলো শুধু আদি নিদর্শন হিসেবেই টিকে থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
একই দোকানের দোকানীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৬০ বছরের তাদের পারিবারিক এই ব্যবসা এখন প্রায় বন্ধের মুখে। এই প্রজন্ম যদিও এর কিছু নিদর্শন পাচ্ছে, কিন্তু পরের প্রজন্মের জন্য এই শিল্প শুধুই কল্পনা থেকে যাবে।
পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই হস্তশিল্পকে যে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়, তা একদম পরিষ্কার করেই বলছেন এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো। তাই তারা আশা করেন সরকারি, বেসরকারিভাবে এই শিল্পকে বাচিয়ে রাখতে নিতে হবে উদ্যোগ আর মানুষেরও থাকতে হবে স্বদিচ্ছা। তাহলেই এই শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে।