আমাদের অনুভূতির নিয়ন্ত্রণ আসলে কার হাতে?
- ইজাজ-উর-রহমান সজল
কেউ আমাদের বিরক্ত করলে আমরা রেগে যাই, কেউ খারাপ ব্যবহার করলে কষ্ট পাই, আর কেউ আমার ইচ্ছে হয়েছে কাজ না করলেই আমাদের অভিমান হয়! সাধারণ এই অনুভূতিগুলো কি আসলেই অন্যের আচার-আচরণের উপর নির্ভরশীল? আমাদের সব অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করা অন্য একজনের জন্য কি এতটাই সহজ?
মজার ব্যাপার হলো, বহু বছর ধরে সাইকোলজিস্টগণ নানা গবেষণার মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করেছেন-অনুভূতি কিভাবে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মূল প্রভাব বিস্তারকারী বিষয় হল-নিজস্ব অনুভূতির ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস!
ব্যাপারটি যদি আমরা একটু ব্যাখ্যা করে বোঝার চেষ্টা করি—আমরা নিজে কি মনে করি সেটা জরুরি। আমাদের অনুভূতি কি আসলেই আমরা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? নাকি রাগ- দুঃখ -কষ্ট এ বিষয়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে? ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর Brett Ford ২০১৮ সালে এ বিষয়টিই দেখার চেষ্টা করেন। তার গবেষণায় সরাসরিভাবে উঠে আসে- ‘আমার অনুভূতি আমার নিয়ন্ত্রণে’- এই বিশ্বাস আমাদেরকে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে! পাশাপাশি ‘আমার অনুভূতি আমার আয়ত্তের বাইরে’- এই বিশ্বাস বিষন্নতাসহ জন্ম দেয় বিভিন্ন মানসিক সমস্যার!
আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ঘটনা কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি, এবং কিভাবে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করি-এটিও নির্ভর করে আমাদের এই বিশ্বাসের উপর। ধরুন, আপনি মনেই করেন না যে, আপনার অনুভূতির উপর নিজের কোন হাত আছে! তাহলে সেটি নিয়ন্ত্রণের কোন চেষ্টাই আপনি করবেন না; রাগ হলে চিৎকার করবেন, সবকিছুর জন্যই অন্যকে দোষারোপ করবেন! কিন্তু যদি আপনার বিশ্বাস থাকে যে, সমস্যা মোকাবেলার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জীবনের মান উন্নত হবে!
এর মানে কিন্তু কখনোই এটি নয় যে, আমাদের সব অনুভূতি সবসময় আমরা নিয়ন্ত্রণ করে সামলে নিতে পারব! কখনো কখনো সেটি প্রকাশ করাই মানসিক সুস্বাস্থ্যের পরিচায়ক। আরেকটি বিষয় মনে রাখা জরুরী, বিশ্বাসগুলো পরিবর্তন হতে সময় প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকেই আমরা কিছু অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাস নিয়ে বড় হচ্ছি; যেমন -কান্না করা দুর্বলতার পরিচয়, মন খারাপ হলেও হাসিখুশি থাকা উচিত, মনের কষ্টের কথা কাউকে বলা ঠিক নয় ইত্যাদি! অনেক সময় নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে আমরাই অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাসগুলো অর্জন করি! বহু দিনের এই বিশ্বাসগুলো থেকে স্বাস্থ্যকর কিছু বিশ্বাসে আসতে সময় প্রয়োজন, সাথে অবশ্যই প্রয়োজন নিজস্ব চেষ্টা!
ইমোশনাল রেগুলেশন বা অনুভূতি স্বনিয়ন্ত্রণের কিছু সহজ উপায় হল:
~অনুভূতি স্বনিয়ন্ত্রণ সম্ভব—এই বিশ্বাস গড়ে তোলা
~নিজের অনুভূতিগুলো চিনতে শেখা
~প্রতিটি অনুভূতিকে নামকরণ করা
~আমি কেন এমন অনুভব করছি—এর কারণ খুঁজে বের করা
~কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি
৩টি ধারণা আপনার জীবন পালটে দেবার জন্য যথেষ্ট
১. পরিস্থিতি দৃশ্যত আমাদের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করলেও, আমাদের বিশ্বাস পরোক্ষভাবে সামগ্রিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
২. কোন অনুভূতি খারাপ বা ভালো নয়! অনুভূতির তীব্রতা এবং প্রকাশভঙ্গির উপর নির্ভর করে, অনুভূতিগুলো ইতিবাচক বা নেতিবাচক হিসাবে আখ্যায়িত হয়।
৩. যা আমার নিয়ন্ত্রনে নেই তার জন্য হা-হুতাশ করে, যা নিজের নিয়ন্ত্রনে আছে তা হারানোর কোন মানে হয় না!
ইজাজ-উর-রহমান সজল
প্রভাষক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি