চাকরিতে এগিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা!
- আলাউদ্দিন চৌধুরী
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তরুণদের মাঝে বেকারত্বের হার তুলনামূলক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চাকরির বাজারে তুলনামূলক এগিয়ে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা। সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা স্নাতকোত্তর (এমএ) তরুণদের মাঝে বেকারত্বের হার ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে এই হার ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ। পিছিয়ে থাকলেও তুলনামূলক বেশি বেতনে চাকরিতে প্রবেশ করছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তরুণরা।
বিআইডিএস এ বছর বিভিন্ন গবেষণা ফল বিস্তরণ উপলক্ষ্যে রবি-সোম দুই দিন সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে তরুণদের কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদের নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজ হতে পাশ করা ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্সের ৪৬ শতাংশ তরুণ চাকরি খুঁজে যাচ্ছেন। তাদের বড়ো অংশ তিন-চার বছরেরও বেশি সময় ধরে বেকার। বাংলাদেশের মতো উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশে যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব একটি বড়ো সমস্যা। তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, শিক্ষিতদের বড়ো একটা অংশ যদি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তাহলে সামাজিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা থেকে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ বলেন, ‘দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অধিভুক্ত অনেক কলেজ রয়েছে, যেগুলোর শিক্ষার মান ভালো নয়। আমরা জরিপে দেখেছি, শিক্ষার্থীরা বলেছে শিক্ষা কারিকুলাম থাকলেও সেগুলো উপযুক্ত নয় অথবা যোগ্য শিক্ষকের অভাব রয়েছে। ফলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তরুণদের চাকরির বাজারের সার্বিক চিত্রে পিছিয়ে রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তুলনামূলক ভালো করছে। চাকরির বাজার শুধু শিক্ষার মানের উপরই নির্ভর করে না, চাকরির বাজারে চাহিদা উপযোগী শ্রমিকেরও অভাব রয়েছে। যেমন দেশে তৈরি পোশাক শিল্পে উচ্চপর্যায়ে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। সেখানে বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে বিদেশিরা। দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব হলে এই অভাব পূরণ করা সম্ভব হতো।’
বিআইডিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশের বেশি বেকার। তারা কোনো ধরনের শিক্ষা কিংবা প্রশিক্ষণেও নেই। সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, তরুণদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ পূর্ণকালীন চাকরিতে এবং ১৮ দশমিক ১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি শিক্ষিতদের নিয়ে অনলাইন জরিপ পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ (২০১৬) জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেকার। মোট বেকারদের ১১ দশমিক ২ ভাগ রয়েছে উচ্চশিক্ষিত। সে হিসাবে বিবিএসের জরিপের তুলনায় বিআইডিএসের জরিপে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গবেষণায় বলা হয়, বেতন পান এমন সার্বক্ষণিক কাজে নিয়োজিত ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ। পূর্ণকালীন আত্মকর্মসংস্থানে আছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। খণ্ডকালীন বেতনভিত্তিক কাজে নিয়োজিত ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। খণ্ডকালীন আত্মকর্মসংস্থানে আছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বেতনভিত্তিক চাকরিতে গ্রামের তুলনায় শহরে কাজের সুযোগ বেশি। এর মধ্যে মেট্রোপলিটন শহর এগিয়ে। তবে আত্মকর্মসংস্থানে শহরের তুলনায় গ্রাম এগিয়ে। গ্রামে বেকারত্বের হার বেশি। জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষা শেষে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত বেকার থাকছেন ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দুই বছরের চেয়ে বেশি সময় ধরে বেকার ১৮ শতাংশ। বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, স্নাতকোত্তর পাশ না করে কোনো তরুণ ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি আশা করতে পারে না। ৪০ হাজার টাকার উপরের বেতনে চাকরি করছেন সর্বোচ্চ ২৯ ভাগ উচ্চশিক্ষিত তরুণ।
সূত্র : ইত্তেফাক