বিল গেটস বললেন পছন্দের ৫ বইয়ের কথা
- ফিচার ডেস্ক
পছন্দের বইগুলো নিয়ে নিয়মিতই নিজের ব্লগে (গেটস নোটস ডটকম) লেখেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। সম্প্রতি তিনি এমন পাঁচটি বইয়ের কথা লিখেছেন, যা তাঁর ভাবনার জগতে প্রভাব ফেলেছে।
ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে এগিয়ে চলছে। এগিয়ে আসছে বছর শেষের দিনটি। বছরজুড়ে কী করলাম না–করলাম, তা পেছন ফিরে দেখায় আনন্দ আছে। গত ১২ মাসে যা কিছু করা হলো, তাতে চোখ বোলানোর জন্য ডিসেম্বর চমৎকার এক সময়। বিশেষ করে গত এক বছরে যেসব বই পড়েছেন, তাতে আবার চোখ বোলানোর জন্য ডিসেম্বর উপযুক্ত এক মাস।
ডেটা (তথ্য) নিয়েই আমার কাজ। তাই আমার পাঠ্যসূচিতে আবার চোখ বোলাতে ভালোই লাগে। এর সঙ্গে নতুন হাওয়া বইছে কি না, তা পরখ করারও চেষ্টা করি। এ বছর বই বাছাইয়ে আমি কল্পকাহিনিই বেশি বেছে নিয়েছি। ভেবেচিন্তে অবশ্য নিইনি। তবে আমি গল্পে ঝুঁকেছি অন্য এক পৃথিবী আবিষ্কারের নেশায়।
বছর শেষ হওয়ার আগের এই সময়ে আমি ডেভিড মিচেলের ক্লাউড অ্যাটলাস বইটি পড়ে ফেলার চেষ্টা করছি। এ বছর আ জেন্টলম্যান ইন মস্কো ও অ্যান আমেরিকান ম্যারেজ বই দুটির পাশাপাশি গ্রায়েম সিমসিয়নের দ্য রোজি রেজাল্ট বইটি পড়েছি। ভয়ানক একটি উপন্যাসও (সিগ্রিড নুনেজের দ্য ফ্রেন্ড) পড়েছি এবার। যে উপন্যাসে এক বিষাদগ্রস্ত নারী গ্রেট ডেন প্রজাতির সারমেয়র সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতায়। এমনকি আমি ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসের ছোট গল্পের সংকলন ব্রিফ ইন্টারভিউজ উইথ হিডিয়াস ম্যানও পড়েছি। ২০২০ সালে হয়তো বছর শেষের বইয়ের তালিকায় ওয়ালেসের ইনফিনিট জেস্ট বইটিও থাকবে। বইটি আমি অনেক দিন ধরেই পড়ব পড়ব বলে ভাবছি।
এ বছর ছুটির দিনের বইয়ের তালিকায় যে পাঁচটি বইয়ের নাম রেখেছি, আশা করি তার সবই আপনাদের ভালো লাগবে। এ-ও আশা করি, এই পাঁচ বই পড়ে ২০১৯ সালটি চমৎকারভাবে শেষ করতে পারবেন, কিংবা ২০২০ সালের সূচনা হবে দুর্দান্তভাবে।
১.
‘অ্যান আমেরিকান ম্যারেজ’
লেখক: টেয়ারি জোনস
আমার কন্যা জেন বইটি পড়তে বলেছিল। এর গল্প এক কৃষ্ণাঙ্গ দম্পতিকে নিয়ে। ভয়ানক এক অবিচারের ফলে বিচ্ছেদ নেমে আসে ওদের সম্পর্কে। জোনসের হাতে জাদু আছে। তাঁর প্রধান দুই চরিত্রকেই আপন মনে হয়, এমনকি ওদের একজন ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও। বইয়ের বিষয়টি ভারী, তবে ভাবনার ডালপালা মেলে দেওয়ার মতো। আমি তো হব না হব না করেও রয় আর সেলেসটিয়ালের বিয়োগান্তক প্রেমকাহিনিতে আবেগাক্রান্ত!
২.
‘দিজ ট্রুথস’
লেখক: জিল লেপোর
অসাধ্যসাধন করেছেন লেপোর। যুক্তরাষ্ট্রের পুরো ইতিহাসই তিনি দুই মলাটে বন্দী করে ফেলেছেন। ৮০০ পৃষ্ঠার এই বইয়ে তাঁর বর্ণনাতেও সে কি মুনশিয়ানা! এমনভাবে লিখেছেন যে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতেও দেখা চলে। ফলে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এটিই আমার পড়া সবচেয়ে বস্তুনিষ্ঠ আমেরিকান গল্প। আপনি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস গুলেও খান, আমি নিশ্চিত, এই বই আপনাকে নতুন কিছু দেবেই দেবে।
৩
‘গ্রোথ’
লেখক: ভ্যাসলাভ স্মিল
প্রথম যখন শুনলাম, আমার প্রিয় লেখকদের একজন তাঁর নতুন বইটি লিখছেন মানুষের বিকাশ নিয়ে, তখন থেকেই অধীর আগ্রহে বসে ছিলাম। তর সইছিল না, বইটি কখন হাতে পাব। (বছর দুয়েক আগে লিখেছিলাম, মানুষ যেভাবে পরবর্তী স্টার ওয়ারস সিনেমার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে, আমিও ঠিক একইভাবে স্মিলের বইয়ের জন্য অপেক্ষা করি। আমি এখনো একই কথা বলছি।) স্মিলের সাম্প্রতিক বইটি হতাশ করেনি। বরাবরই যা হয়, স্মিল যা বলেন, তার সবকিছুর সঙ্গে আমি একমত হতে পারি না। তারপরও অতীত বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষেত্রে স্মিল সেরা চিন্তাবিদদের একজন।
৪
‘প্রিপেয়ার্ড’
লেখক: ডায়ান ট্যাভেনার
প্রত্যেক মা-বাবাই জানেন, জীবন চলার পথে সন্তানকে প্রস্তুত করে তোলার যাত্রাটি কতটা লম্বা। তাঁরা খুব জানেন, এই যাত্রাপথ মাঝেমধ্যে কতটা দুর্গমও হয়ে ওঠে। ট্যাভেনার যুক্তরাষ্ট্রের সফল কিছু স্কুলের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। সেই ট্যাভেনারই খুব দরকারি পথনির্দেশিকা ধরনের বইটি লিখেছেন, যাতে সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার প্রক্রিয়াটি আরও সহজ এবং ফলপ্রসূ হয়ে ওঠার পরামর্শ আছে। এই বইয়ে লেখক শিশুদের পড়ানোর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তবে এই অভিজ্ঞতায় কেবল শিশুদের কলেজে ওঠার জন্য কী প্রয়োজন, তা-ই উঠে আসেনি; ট্যাভেনার বলেছেন, কী করে জীবনটা সুন্দর করে কাটানো যায়।
৫
‘হোয়াই উই স্লিপ’
লেখক: ম্যাথিউ ওয়াকার
এ বছর মানুষের আচার-আচরণ বিষয়ে বেশ কয়েকটি বই পড়েছি। তার মধ্যে এটিই জবরদস্ত এবং নিগূঢ়। জেন (বিল গেটসের মেয়ে) ও জন ডোর (মার্কিন বিনিয়োগকারী)—দুজনই বইটি পড়তে বলেছিল। ওদের কথামতো বইটি পড়ে শেষ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সবাই জানেন, রাতে ভালো ঘুম কতটা জরুরি। তবে আদতে রাতে ভালো ঘুম বলতে কী বোঝায়? এবং কী করেই–বা আপনি ভালো ঘুম দেন? ওয়াকার আমার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় পরিবর্তন করিয়ে ছেড়েছেন। আপনার নতুন বছরের সংকল্প যদি হয় সুস্বাস্থ্য, তাহলে ওয়াকারের পরামর্শ দিয়ে শুরু করাই উত্তম।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মাহফুজ রহমান
সূত্র: প্রথম আলো