শিক্ষার্থীদের ‘গ্রোথ মাইন্ডসেট’ শেখালো হান্ড্রেড মিলিয়ন মাইন্ডসেট
- তৌফিকুর রহমান তন্ময়
হলিপার্ক আইডিয়াল স্কুল, ঢাকা শহরের শনির আখড়ায় অবস্হিত একটি বিদ্যালয়। এবং এর পেছনে রয়েছে একজন উদ্যমী মানুষের মহান উদ্যোগ। তার নাম আকরাম হোসেন, যিনি তার উদ্যমী চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিদ্যালয়টি। শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো এমন কিছু মন্ত্র মনে ধারণ করেই হয়তো তাদের এগিয়ে চলা। এবং সেই বিদ্যালয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি উপস্থিত হয়েছিল হান্ড্রেড মিলিয়ন মাইন্ডসেট (100 Million Mindset)। লক্ষ্য আকরাম হোসেনের মতো মানুষদের মহৎ উদ্যোগের সাথে নিজেদের এক করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে গ্রোথ মাইন্ডসেটের ধারনা ছড়িয়ে দেওয়া। শিক্ষার্থীরা যেন মনে ধারণ করতে পারে যে তাদের ব্রেইনকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। তারা কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং তারা যে কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারে তাদের ব্রেইন ও মাইন্ডসেটের যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে।
গ্রোথ মাইন্ডসেটকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে হলিপার্ক আইডিয়াল স্কুলে হানড্রেড মিলিয়ন মাইন্ডসেট তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমেই শুরু হয় পরিচয় পর্ব। এর দ্বারাই মূলত শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের প্রথম পর্ব শুরু হয়। তারা একে একে এসে নিজেদের পরিচয় এবং তাদের কি ভালো লাগে অর্থাৎ তাদের ইচ্ছেগুলো ব্যক্ত করতে থাকে। একই সাথে তাদের প্রত্যেকের, নিজেদেরকে সবার সামনে উপস্হাপনের প্রচেষ্টা ছিল অকল্পনীয়। এর পরে শুরু হয় তাদের থেকে তাদের গল্প শোনার পর্ব। আপনি যখন কোনো মানুষের সাথে মিশে যেতে চাইবেন তখন আপনার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত সেই মানুষের গল্প শোনা। আর এই জন্যই হানড্রেড মিলিয়ন মাইন্ডসেটের এই পদক্ষেপ। এভাবেই তারা মিশে গিয়েছিলো হলিপার্ক আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে। এর পরেই তাদের দেওয়া হয় ম্যাথ টেস্ট। এর মুল কারণ ছিলো তারা কত তাড়াতাড়ি তাদের ব্রেইনকে ব্যবহার করতে পারছে। এটি তাদের কোনো মূল্যায়ন নয় বরং তাদের ব্রেইনকে দ্রুত কাজে লাগানোর একটি প্রচেষ্টা মাত্র। এর পরেই শুরু হয় ব্রেইন দিয়ে ছবি আঁকি পর্ব। এই পর্বে তারা কি ভাবছে তা যেন তারা রং পেন্সিল দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে পারে, এটিই ছিল লক্ষ্য। এটিকেই মুলত আমরা বলতে পারি গ্রোথ মাইন্ডসেট যেখানে ছবি আঁকার বিষয়বস্তুও কখনো স্থির নয়। এভাবেই হানড্রেড মিলিয়ন মাইন্ডসেট হলিপার্ক আইডিয়াল স্কুলে তাদের কার্যক্রম শেষ করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রায়শই পরিলক্ষিত হয় ছোট বড় অনেকেই ফিক্সড মাইন্ডসেট দ্বারা প্রভাবিত। আজও ঘরে ঘরে বাবা মা চায় তাদের ছেলে মেয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে। এবং এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তারা এগিয়ে যেতে থাকে। ফলে ছেলে মেয়েদের মাঝেও এই ধারনাটিই বদ্ধমুল হয়ে থাকে যে, যেভাবেই হোক তাকে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এর ফলে তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাগুলো সে প্রকাশ করতে পারে না, আবার অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাছে প্রতিভা প্রকাশের চেষ্টাকে অনর্থক মনে হয়। ফলশ্রুতিতে তাদের প্রতিভাগুলো ঢাকা পড়ে যায় তাদের গৎবাধা চিন্তা অর্থাৎ ফিক্সড মাইন্ডসেটের আড়ালে। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝে থেকে অসংখ্য প্রতিভা প্রতিনিয়ত, শুধু ফিক্সড মাইন্ডসেটের প্রভাবে। হানড্রেড মিলিয়ন মাইন্ডসেটের মুল লক্ষ্যই হলো এই ফিক্সড মাইন্ডসেটকে গ্রোথ মাইন্ডসেটে রূপান্তর করা। প্রতিটি শিশুকে তার প্রতিভার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, যা সে চাপা রাখতে চায় তার ফিক্সড মাইন্ডসেট দ্বারা। নিজের ব্রেইনকে কাজে লাগাতে পারলে পৃথিবীর কোনো কাজই অসম্ভব নয়, এই বিষয়টি যখন শিশুরা মনে ধারণ করতে শুরু করবে তখনই তাদের ফিক্সড মাইন্ডসেট থেকে গ্রোথ মাইন্ডসেটে উত্তরণ সম্ভব হবে, এবং এই লক্ষ্যে তাদের সাথে সর্বদা কাজ করতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ হানড্রেড মিলিয়ন মাইন্ডসেট।