অনলাইনে ‘ই-পাসপোর্ট’ পাবেন যেভাবে
- ফিচার ডেস্ক
বাংলাদেশে প্রায় এক মাস ধরে ই-পাসপোর্ট অনলাইনে চালু করা হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসগুলোতে প্রচুর চাপ পড়েছে। ই-পাসপোর্ট-এর সার্ভার প্রায়ই ডাউন থাকায় লাইনে দুই থেকে তিন ঘন্টা দাঁড়াতে হয়। নতুন এই “ই-পাসপোর্টে”র কারণে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বইয়ের প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের। এ কারণে এমআরপি বই মজুদও কম হওয়ায় পাসপোর্ট বইয়ের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। অচিরেই এই সমস্যাগুলো আর থাকবে না। আমাদের দেশে ই-পাসপোর্ট মাত্র শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে আধুনিক পাসপোর্টের ধারণা শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ‘কনফারেন্স অন পাসপোর্ট অ্যান্ড কাস্টমস ফ্যামিলিয়ারিটিজ থ্র টিকিট’ লীগ অব নেশন্স বৈঠকের মাধ্যমে। এ কনফারেন্সে আধুনিক পাসপোর্টের বুকলেট ডিজাইন ও গাইড লাইন দেওয়া হয়। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের ধারণা আসে ১৯৮০ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু হয় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। তার আগে ২০০৮ সালে উন্নত দেশগুলোতে ই-পাসপোর্ট চালু হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরই হাতে লেখা পাসপোর্ট চালু হয়। এই হাতে লেখা পাসপোর্ট ব্যবহার করার সময়সীমা ছিল ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৫ সালের পরে পৃথিবীর কোন দেশ ট্রাডিশনাল নিয়মে হাতে লেখা পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবে না। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে ৬.৬ মিলিয়ন হাতে লেখা পাসপোর্টকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে রূপান্তরিত করে। সরকার বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টকে ই-পাসপোর্ট বা বায়োমেট্রিক পাসপোর্টে রূপান্তরিত করেছে।
ই পাসপোর্ট-এ ইলেক্ট্রনিক মাইক্রো প্রোসেসর চিপ লাগানো থাকে। আপাতত দৃষ্টিতে পাসপোর্ট বইটি দেখে কোন কিছু বুঝা যাবে না। দেখতেও অনেকটা MRP পাসপোর্টের মতই। কিন্তু ভিতরে সংযুক্ত চিপটি এম আর পি (মেশিন রিডেবোল পাসপোর্ট) আর ই পাসপোর্টের মধ্যেকার প্রধান পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। এই চিপের মধ্যে আছে বায়োমেট্রিক তথ্য যা পাসপোর্টধারীর যাবতীয় তথ্য বহন করে। এতে মাইক্রো প্রসেসর চিপ এবং অ্যান্টেনা সহ স্মার্ট কার্ডের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
বর্তমানে ই পাসপোর্টে যে সব বায়মেট্রিক সংরক্ষণে থাকবে তা হল পাসপোর্টধারীর ছবি, ১০ আঙ্গুলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং চোখের আইরিশ। ই বর্ডার বা ইলেক্ট্রনিক বর্ডার কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক যাচাই করা হয়ে থাকে। পাবলিক কিই ইনফ্রাস্ট্রাকচার (PKI) এর মাধ্যমে চিপে সংরক্ষিত ডাটা যাচাই করা হয়ে থাকে। এতে পাসপোর্টধারীর ৩ ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি থাকবে।
ই-পাসপোর্টের সবচাইতে বড় সুবিধা হল ই পাসপোর্টধারীরা বিশেষ ই – গেট ব্যাবহার করে খুব দ্রুত ইমিগ্রেশন পার হতে পারবেন। এজন্য তাদেরকে ভিসা চেকিং এর লাইনের দাড়াতে হবে না। এতে করে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া খুব দ্রুত শেষ হবে। উল্লেখ্য যে এই ই – গেট শুধুমাত্র ই পাসপোর্টধারীরাই ব্যবহার করতে পারবেন।
ই-গেটের কাছে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রাখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি তুলে নেয়া হবে। এরপর আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে নেয়া হবে সহজেই। কোন সমস্যা না থাকলে খুব দ্রুত শেষ হবে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া। আর কোন ঝামেলা থাকলে লাল বাতি জলে উঠবে এবং পাসপোর্টধারীকে সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইমিগ্রেশন পার হতে দেয়া হবে না।
আবেদনের ফরমে নতুন যা যুক্ত হয়েছে
ফরমে ৮৭ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এবার নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। এই ফরমে পাসপোর্টের মেয়াদ (৫ বছর অথবা ১০ বছর) ও পাসপোর্টের পাতার সংখ্যা (৪৮ অথবা ৬৪) এবং বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হবে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টার অতি জরুরি পাসপোর্ট প্রয়োজন হলে আবেদনকারীকে নিজ উদ্যোগে আগেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আনতে হবে। এক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফরমে প্রি-পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের নম্বর ফরমে উল্লেখ করতে হবে। আবেদনের সময় জমা দিতে হবে ক্লিয়ারেন্সের কপি। এই পাসপোর্ট করতে আবেদনের ফরমে বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে কোনো ধরনের সত্যায়ন লাগবে না।
প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ সরকারের ই-পাসপোর্ট এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে https://epassport.gov.bd/landing। পাঁচটি ধাপে ফরম পূরণ করে Application summary ও পূরণকৃত Applicaion form-এর pdf ফাইল প্রিন্ট করতে হবে। আপনার পছন্দের তারিখ ও সময় মেইলে জানানো হবে। ব্যাংকে ই-পাসপোর্ট ফির রশিদসহ NID, BRC, পুরাতন পাসপোর্ট যদি থাকে সেগুলোসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।
নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে স্মার্টফোনে Application summary দেখাতে হবে। তারপর আপনার ছবি, ১০ আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশ, ডিজিটাল স্বাক্ষর নেওয়ার পর ডেলিভারি স্লিপ হাতে পাবেন। নতুনদের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে।
ই-পাসপোর্ট ফি
পাসপোর্টে পৃষ্ঠা সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ৪৮ ও ৬৪ পৃষ্ঠা এই দুই ধরনের ই-পাসপোর্ট থাকছে। উভয় ধরনের পাসপোর্টে ডেলিভারি সময় অনুযায়ী আরও তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। আর সে অনুয়ায়ী পাসপোর্টের ফি নির্ধারণেও রয়েছে ভিন্নতা।
সাধারণ ফি প্রদান সাপেক্ষে পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে প্রায় ২১ দিন
জরুরি ফি প্রদান সাপেক্ষে পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে প্রায় ৭ দিন
অতিজরুরি ফি প্রদান সাপেক্ষে পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে প্রায় ১ দিন
বিদেশে অবস্থারত বাংলাদেশিদের জন্য
অন্যদিকে, বিদেশে অবস্থারত বাংলাদেশিদের জন্য পৃথক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট সাধারণভাবে পেতে ফি দিতে হবে ৩০ মার্কিন ডলার। আর ১০ বছর মেয়াদি হলে ফি দিতে হবে ৫০ মার্কিন ডলার। ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট সাধারণভাবে পেতে ফি দিতে হবে ১৫০ মার্কিন ডলার। আর ১০ বছর মেয়াদি হলে ফি দিতে হবে ১৭৫ মার্কিন ডলার। ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট জরুরিভাবে পেতে ফি দিতে হবে ৪৫ মার্কিন ডলার। ১০ বছর মেয়াদি হলে ফি দিতে হবে ৭৫ মার্কিন ডলার। ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট জরুরিভাবে পেতে ফি দিতে হবে ২০০ মার্কিন ডলার। ১০ বছর মেয়াদি হলে ফি দিতে হবে ২২৫ মার্কিন ডলার।
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিক ও শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য পৃথক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। দূতাবাসের মাধ্যমে ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট সাধারণভাবে পেতে ফি দিতে হবে ১০০ মার্কিন ডলার। আর ১০ বছর মেয়াদি হলে ফি দিতে হবে ১২৫ মার্কিন ডলার। ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট সাধারণভাবে পেতে ফি দিতে হবে ১৫০ মার্কিন ডলার। আর ১০ বছর মেয়াদি হলে ফি দিতে হবে ১৭৫ মার্কিন ডলার।
৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট জরুরিভাবে পেতে ফি দিতে হবে ১৫০ মার্কিন ডলার। ১০ বছর মেয়াদি হলে ফি দিতে হবে ১৭৫ মার্কিন ডলার। ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট জরুরিভাবে পেতে ফি দিতে হবে ২০০ মার্কিন ডলার। ১০ বছর মেয়াদি হলে ফি দিতে হবে ২২৫ মার্কিন ডলার।
পাসপোর্ট বিধিমালা অনুসারে এই ফি’র সঙ্গে নির্ধারিত হারে ভ্যাটসহ অন্যান্য চার্জ যুক্ত হবে। বিদেশে আবদনকারীদের ক্ষেত্রে সারচার্জ যুক্ত হবে।