হবসনস চয়েস : কাজ করিয়ে নেওয়ার গোপন উপায়
- নীলামণি গোস্বামী
একটা গোপন উপায় বলি? এ উপায় দিয়ে খুব সহজেই আপনি নিজের যে কোন কাজ, যে কারও কাছ থেকে করিয়ে নিতে পারবেন। আপনার কেবল তিনটি ধাপে কাজটি করতে হবে। ধাপগুলো হল –
১. আপনার কাছে সে জিনিসটা থাকতে হবে, যা সামনের মানুষটার দরকার। অর্থাৎ যাকে দিয়ে আপনি কাজটি করিয়ে নিতে চান, তার প্রয়োজনের কোন জিনিস কিংবা সুবিধা অবশ্যই আপনার হস্তগত হতে হবে।
২. আপনি খুব করে চাইছেন কাজটা হোক কিংবা আপনার প্রচন্ডভাবে দরকার সামনের মানুষটাকে দিয়ে ঐ কাজটা করিয়ে নেয়া, এটা তাকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না। বরং এমন ভাব দেখাতে হবে যেন ওটা ছাড়াও আপনি চলতে পারবেন। এবং আপনার আরও অনেক অপশন আছে।
৩. কখনও সামনের মানুষটাকে জিজ্ঞেস করবেন না সে কী চায়। তার সামনে সবসময় দু’টো অপশন রাখবেন।
প্রথম অপশন হলো – যা আপনি চান।
আর দ্বিতীয়টা হলো – যা সে কিছুতেই করবে না।
উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা সম্ভবত আর একটু সহজ হবে। যেমন ধরুন আপনার বাসার শিশুটির অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। তাকে যখন আপনি জিজ্ঞেস করবেন – ‘বাবা কী খাবে তুমি?’
সে তখন আহ্লাদী স্বরে নানান রকম খাবার দাবারের কথা বলবে। যার বেশীরভাগই হবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এবং এসব খাবার আপনি তাকে কিছুতেই খেতে দিতে চান না। বরং আপনি চান সে দুধ আর রুটি খেয়ে নিক। কিন্তু বাচ্চাটা সে খাবার কিছুতেই খাবে না!
এক্ষেত্রে আপনি তিন ধাপ বিশিষ্ট এই ট্রিক্সটা ব্যবহার করতে পারেন, যার কথা আমি বলেছি উপরে। বাচ্চাকে কখনোই জিজ্ঞেস করবেন না সে কী খেতে চায়। বরং তাকে তার সামনে দু’টো চয়েস রাখুন।
প্রথম চয়েসটা হবে এমন কিছু, যা সে কিছুতেই খাবে না, এবং তার খুব অপছন্দের। ( হতে পারে সেটা করলা কিংবা কোন তিতকুটে ঔষধ।)
আর দ্বিতীয় চয়েসটা দিবেন দুধ- রুটি। দেখবেন তখন ম্যাজিক। একটু আগে দুধ রুটি খেতে না চাওয়া বাচ্চাটা গড়গড় করে দ্বিতীয় অপশন অর্থাৎ দুধ রুটিটাকেই বেছে নিবে।
আর একটা উদাহরণ দেই, তাহলে বুঝতে সম্ভবত আর একটু সুবিধা হবে আপনাদের। যেমন ধরুন আপনি কোন অফিসের বস। আপনার অধীনে কর্মরত কোন কর্মী কাজে প্রচুর অনিয়ম করছে, যার কারনে আপনার লোকসান হচ্ছে৷ আপনি অবস্থার উন্নতির জন্য বারবার সে কর্মীকে ট্রেইন করছেন, ঝাঁড়ি দিয়ে আবার কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন, কখনওবা মোটিভেট করছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না৷ তখন নিরুপায় হয়ে আপনার তাকে কাজ থেকে বের করে দিতে হবে। কিন্তু কর্মীটি বড্ড পাজি।সে কাজও ছাড়বে না৷ কাজ ছেড়ে দিতে বললে সে আপনার নামে কুৎসা রটানোর হুমকি দেয় কিংবা বলে অফিসের সামনে বসে আন্দোলন করবে, থানা -পুলিশে মিথ্যে মামলা করবে, গুন্ডা দিয়ে পেটাবে আরও কত কী!
বড্ড ঝামেলার বিষয়। মান সম্মান বাঁচানোর জন্য আপনি তখন কিছুই বলতে পারেন না, কিংবা ঝামেলার ভয়ে চুপচাপ থাকেন। কিন্তু ঐ বদমাইশ কর্মীটিকেও কিন্তু আপনি খুব সহজেই কাজ থেকে বরখাস্ত করতে পারবেন কেবল দু’টো অপশন দিয়ে।
কীভাবে? বলছি শুনুন।
প্রথম অপশনে আপনি কর্মীটিকে এমন কোন জায়গায় ট্রান্সফার করার কথা বলবেন, যেখানে সে কিছুতেই যাবে না৷ কিংবা কেউই যেতে চাইবে না। এবং বলবেন এরকম ট্রান্সফার আরও চার – পাঁচবার সহ্য করতে হবে। এটাই তার শাস্তি৷
আর দ্বিতীয় অপশনে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলা হবে।
আপনার সে কর্মী চোখ বন্ধ করে দ্বিতীয় অপশনটাই বেছে নিবে।কারন বারবার ঝামেলা মোকাবেলা করে কাজ করতে কারোরই ভালো লাগে না। আর অপছন্দের জায়গাগুলোতে ট্রান্সফার হয়ে মানিয়ে নিতেও বেশ সমস্যা হয়৷ তাছাড়া পরিবার সহ বার বার বাসা বদলানোটাও খুব কষ্টকর৷ উপরন্তু সে কর্মীটি দায়িত্বজ্ঞানহীন , যার অনিয়মের কারনে আপনার লোকসান হচ্ছিলো। সে মানসিকভাবেও দুর্বল হবে। ভয়ের চোটে এমনিতেই কাজ ছেড়ে পালাবে।
খুব মজার একটা সাইকোলজিক্যাল ট্রিক্স এটা। নাম ‘হবসনস চয়েস’।এখানে দু’টো খারাপ জিনিসের মাঝে অপেক্ষাকৃত কম খারাপ জিনিসটা বেছে নেয়া হয়। যার অর্থ হলো তোমাকে এমন একটা অপশন বাছাই করতে হবে, যা আমি চাই, নতুবা কোনটাই গ্রহণ না করা৷ এ প্রক্রিয়াতে আসলে কায়দা করে কেবল একটি চয়েসই দেখানো হয়, কিন্তু অপশন দেয়া হয় দু’টো৷ প্রথমে দিতে হয় খুব খারাপ একটা অপশন আর দ্বিতীয় অপশনটা হলো যা আপনি চান। বেশীরভাগ মানুষই এই ট্রিক্সটার কাছে ভীষনরকমের অসহায় বোধ করে আর অপর পাশের মানুষটার কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়।
জোর জবরদস্তি না করেও কোন মানুষকে আপনার নিজের ইচ্ছে মোতাবেক চলতে বাধ্য করার স্মার্ট একটা উপায় এটা।
পরিশেষে ‘হবসনস চয়েস’ এর আর একটা পিকুলিয়ার উদাহরণ দিয়ে আজকের লেখাটি সমাপ্ত করছি৷
ধরুন আপনি একজন ছেলে এবং একটা মেয়েকে আপনার খুব পছন্দ, তাকে বিয়ে করতে চান। কিন্তু বাসায় কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না। তবে আপনি যদি সাহস করে ছোট্ট একটা ট্রিক্স খেলতে পারেন আপনার পরিবারের সাথে, তাহলে খুব সহজেই আপনি বিয়ে করে ফেলতে পারবেন পছন্দের মানুষটিকে৷
সাহস করে নিজের বাবা মাকে গিয়ে বলুন যে আপনি একজন সমকামী এবং একটা ছেলেকে আপনার খুব পছন্দ। তাকেই বিয়ে করতে চান। এরকম অবস্থা চার -পাঁচমাস চলতে দিন৷ তারপর হঠাৎ একদিন গিয়ে বলুন যে, আপনার মত পাল্টে গেছে। এখন আপনি একটা মেয়েকে পছন্দ করতে শুরু করেছেন। দেখবেন ম্যাজিকটা তখনি ঘটে যাবে৷ বাপ-মা খুশীর চোটে আত্নহারা হয়ে আপনাকে ধরে -বেঁধে ঐ মেয়েটার সাথেই বিয়ে দিয়ে দেবে। জ্বি হ্যাঁ,উপায়টা হাস্যকর হলেও কাজ অবশ্যই হবে। আর এটাই হলো হবসনস চয়েসের জাদু!
সূত্র: লিপিকরণ