করোনা মোকাবিলায় মালয়েশিয়ার পরিকল্পনা
- সংবাদ ডেস্ক
আশিয়ান সদস্যভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়াতেই সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার কারণে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোগী সনাক্তের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে এবং এর প্রেক্ষিতে তারা পর্যাপ্ত সংখ্যক রোগীর শয্যা এবং অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুত রাখতে পেরেছে।
বর্তমানে মালয়েশিয়া প্রতিদিন সাত হাজার মানুষকে পরীক্ষা করছে এবং দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এপ্রিলের শেষ নাগাদ তারা এই পরীক্ষাকে প্রতিদিন ১৬ হাজারে উত্তীর্ণ করতে চায়। এজন্য ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা এবং নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছে তারা।
করোনা মহামারি মোকাবেলায় অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া সত্যিই একটা আশাজাগানিয়া দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কোনো ধরনের লকডাউন ছাড়াই ৫০ মিলিয়ন মানুষের দেশটি করোনাভাইরাসের গণ-সংক্রমণ ঠেকাতে সফল হয়েছে। এই সাফল্যের গোপন রহস্য কী? রহস্য আর কিছুই নয়, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। এই পরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে তারা যুক্ত করেছে আইওটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে খুব সহজেই তারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পেরেছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত আলাদা করে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টিন) করতে পেরেছে।
দ্রুততম সময়ে কোভিড-১৯ সনাক্তকরণের এই দক্ষিণ কোরীয় পদ্ধতি যার নাম ড্রাইভ থ্রো, তা অনুসরণ করছে মালয়েশিয়া।এই পদ্ধতির সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং উন্নত পিপিই-এর উপর। এ দুটির ব্যাপারে খানিকটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে মালয়েশিয়ার। তাই মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন এক ধরনের ‘কোভিড-১৯ স্ক্রিনিং বুথ’ তৈরির প্রস্তাব করেছে যার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা করা যাবে এবং অল্প সংখ্যক পিপিই দিয়েই স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।
কেমন ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার টেস্টিং বুথ
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে গত ১৬ মার্চ কোভিড-১৯ সনাক্তকরণ টেস্টিং বুথ চালু করা হয়। দেশটির গুয়াংকগু জেলার ইয়াংজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই বুথ উদ্ভাবন করে। বুথটি দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ৭০০ মিলিমিটার এবং উচ্চতায় ২০৫০ মিলিমিটার। এর ভিতরে সুন্দরভাবে চাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে এবং ইউভি ল্যাম্প রয়েছে। এই বুথের মধ্যে রোগীকে ঢুকিয়ে চিকিৎসকরা সহজেই নতুনা সংগ্রহ করতে পারেন। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে রোগীর মুখোমুখী বসে কথা বলতে হয় না বা নমুনা সংগ্রহ করতে হয় না। এতে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিমুক্ত থাকতে পারেন। আরও একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ঘণ্টায় অন্তত ১০জন মানুষকে পরীক্ষা করা যায়।
মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্য
দ্রুত এবং নিরাপদ পরীক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই বুথ ব্যবহার করতে চায়। মালয়েশিয়ার উষ্ণ আবহাওয়া বিবেচনায় রেখে বুথটির নকশায় একটু ভিন্নতা আনা হয়েছে। এটি আকারে দক্ষিণ কোরীয়দের বুথের চেয়ে একটু বড় হবে, যাতে করে এর মধ্যে মা বাবারা ছোট্ট সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারে এবং প্রয়োজনে হুইলচেয়ারসহ কোনো রোগী প্রবেশ করতে পারে। এই বুথে সর্বশেষ আইওটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। যেমন:
১. ইউভি-সি ইলুমিনেশনযুক্ত স্প্রে ব্যবস্থা থাকবে।
২. রোগীর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীরা কথা বলবেন স্মার্ট ভয়েসের মাধ্যমে, সেই ব্যবস্থা থাকবে।
৩. ডাক্তার এবং রোগী—উভয়ের জন্যই বুথটি হবে নিরাপদ।
যা যা প্রয়োজন
ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সরাসরি মতামত নিয়ে এই বুথের ডিজাইন তথা নকশা করা হয়েছে। এরজন্য সংক্রামক রোগতত্ত্ব বিভাগ, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, তোয়াংকু ফাওজিয়াহ হাসপাতালের প্রকৌশলসেবা বিভাগ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ ও অর্থায়নে বুথটি নির্মিত হচ্ছে। এর জন্য যা যা প্রয়োজন, সেগুলো হচ্ছে:
১. বিদ্যুৎ: কম খরচে বুথ চালানোর জন্য হাসপাতালের পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে বুথটি সংযুক্ত রাখতে হবে।
২. লোকবল: একজন চিকিৎসক এবং একজন সহকারী চিকিৎসকসহ অন্তত দুইজন স্টাফ প্রয়োজন বুথটি পরিচালনা করার জন্য।
৩. স্যানিটাইজার: পর্যাপ্ত জীবানুনাশক তরল প্রয়োজন।
৪. ব্যবস্থাপনা: যেকোনো সময় বুথের যেকোনো যন্ত্র বিকল হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ যন্ত্র পুনস্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ তহবিল থাকতে হবে। এছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, জীবানুনাশক ইত্যাদির জন্যও পর্যাপ্ত বাজেট রাখতে হবে।
ছবিতে বুথের ডিজাইন
যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন
১. বুথের দেয়াল ও ছাদের জন্য মেটাল ওয়াল প্যানেল
২.স্বচ্ছ প্যানেলের জন্য অ্যাক্রিলিক অথবা প্লাস্টিকের প্যানেল
৩. অবকাঠামোর জন্য অ্যালুমিনিয়াম অথবা মেটাল প্লেট
৪. দরজার জন্য সিলড গ্লাস ডোর প্যানেল
৫. অটোমেটিক ভয়েস কমিউনিকেশন
৬. স্বয়ংক্রিয় ইউভি এবং তরল স্প্রে স্যানিটাইজার
৭. টু-এইচপি এয়ার কন্ডিশন এবং ইউভি-সি স্ট্যারিলাইজেশন
খরচাপাতি
আরও যা যা প্রয়োজন
১. এন-৯৫ মাস্ক
২. গ্লভস
২. আইসোলেশন গাউন
৩. চক্ষু নিরাপত্তা চশমা
৪. মস্তক নিরাপত্তা টুপি (হেড কভার)
৫. বুট জুতা অথবা জুতার কভার
সূত্র : মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম