কোভিড-১৯ বিষয়ক ৬টি গবেষণা ফলাফল প্রকাশিত
- সংবাদ ডেস্ক
ব্র্যাক-জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ করোনাভাইরাস নিয়ে ছয়টি পৃথক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। গবেষণাগুলোতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী, গার্মেন্টস কর্মী, ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মী ও হিজড়া জনগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত প্রভাব দেখা হয়েছে। এই গবেষণাগুলোর ফলাফল গত শনিবার অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। গবেষণা ফলাফলে যে উদ্বেগজনক চিত্র ফুঠে উঠেছে তা হলো: হঠাৎ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রভাব মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মী তথা চিকিৎসক ও সেবিকা, গার্মেন্টস কর্মী এবং শহরের বস্তিগুলোতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের প্রাত্যহিক জীবনেও সংগ্রাম করছেন।
তড়িৎ কেস স্টাডি গবেষণায় ঢাকা শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও হিজড়া জনগোষ্ঠীদের মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে উচ্চমাত্রার ভয় ও আতংক দেখা গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করোনার লক্ষণগুলো অস্পষ্ট। এই জনগোষ্ঠীগুলোতে ভৎর্সনা, নজরদারি, বৈষম্য ও হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরেকটি গবেষণায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ৬০ জন ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এই গবেষণার মতে, ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীরা উপযুক্ত মানের পিপিইর জরুরী প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করেন। তারা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনার থেকে পিপিইর গুরুত্ব বেশি দেন। তারা শুধু শারীরিকভাবেই পরিশ্রান্ত নন পাশাপাশি তাদের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তীব্র মানসিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন।
জেপিজি এসপিএস জনজীবনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন মানুষজনের আয় বা উপার্জন, পুষ্টি, লিঙ্গ, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব অনুধাবনের নিমিত্তে একটি বহুস্তরীয় টেলিফোনিক জরিপও পরিচালনা করছে। প্রথম ধাপে, মূলত এপ্রিল ৬-১৩ তারিখ পর্যন্ত সময়ে, ১৩০৯ জন মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যগত দিক বিচারে, একেবারেই আয় উপার্জন নেই এমন গৃহস্থালির মানুষ জন (৫৮%) আংশিক আয় (২৯%) অথবা আয়ের উপর কোন প্রভাব নেই (১৩%) এমন গৃহস্থালির মানুষজনের তুলনায় অধিক মানসিক চাপের মাঝে থাকে বলে পরিলক্ষিত হয়। একইভাবে ৩৭ শতাংশ গৃহস্থালি হতে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, তারা প্রধানত ভাত, ডাল এবং আলু খেয়ে জীবনধারণ করছে। এই সমস্ত গৃহস্থালির মানুষজন যারা মূলত বাধ্য হয়ে এইরকম পুষ্টিগত দিক বিচারে বৈচিত্রহীন খাবার খেয়ে বেঁচে আছে তাদের মাঝে অধিক মানসিক চাপ লক্ষ করা গেছে।
অধিকন্তু, কোভিড-১৯ সম্পর্কে জনসচেতনতা এবং জ্ঞানের সার্বিক অবস্থার এক ভয়ানক চিত্র তুলে ধরে। গ্রামের এবং নারী তথ্যদাতারা মূলত নগরের এবং পুরুষ তথ্যদাতাদের তুলনায় করোনাভাইরাস কিভাবে ছড়ায় তার মাধ্যমগুলো সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত কম জানে বলে দেখা যায়। এছাড়াও, কেবলমাত্র ৩৮ ভাগ তথ্যদাতারাই ৩ ফুট দূরত্ব মেনে চলার কথা উল্লেখ করেছেন। ভাইরাসের কারণে যে স্টিগমা এবং মৃত্যুভয় তার সুদূর প্রসারী ব্যাপকতা লক্ষণীয়।
এই ছয়টি গবেষণা মূলত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালা সামনে নিয়ে আসে যেগুলো বাস্তবায়িত হলে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবাপ্রদানকারী, নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য প্রান্তিক মানুষজনের উপর এই মহামারীর প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে। এগুলো হচ্ছে, ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী যারা মূলত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের পরিচালনায় কাজ করছে তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সঠিক এবং মানসম্মত পিপিই সরবরাহ করা, ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য তাদের কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া, এবং চীনের উহানে অনুসরণকৃত ৭/১৪ মডেল (৭ দিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন পালন) অনুসারে আমাদের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদেরও পালা এবং পর্যায়ক্রিমক দায়িত্ব বন্টণ এবং তাদের বাধ্যতামুলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ।
নিম্ন আয়ের লোকদের খাবার ও আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে এবং এখানে ভুল তথ্য ও ভৎর্সনার বিষয়গুলো উল্লেখ করে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জ্ঞান প্রচারের আরও সুযোগ রয়েছে। এই জাতীয় প্রচারণাগুলো আরো কার্যকরী করার জন্য নির্দিষ্ট গোষ্ঠীভিত্তিক প্রযোজ্য প্রচারণা চালাতে হবে।