আবুল মকসুদ কেন সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরতেন
- ফিচার ডেস্ক
সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের নাম এলেই চোখে ভেসে ওঠে সাদা কাপড় পরিহিত এক সৌম্য ব্যক্তির ছবি। সেলাইবিহীন দুই প্রস্ত থান কাপড় শরীরের জড়িয়ে রাখতেন তিনি।
শীতে-গ্রীষ্মে, ঝড়-বৃষ্টিতে এই পোশাকের বাইরে অন্য কোনো পোশাকে তাকে সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি।
কিন্তু কেন সৈয়দ আবুল মকসুদের এই ব্যতিক্রমী পোশাক?
দীর্ঘদিনের স্বজন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হোসেন বলেন, ২০০৩ সালে ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদে তিনি ঘোষণা দিয়ে পশ্চিমা পোশাক বর্জন করে এই পোশাক পরতে শুরু করেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইরাক থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই পোশাক ত্যাগ করবেন না।
ইরাক থেকে মার্কিন সেনা এখনও বিদায় নেয়নি। সৈয়দ আবুল মকসুদ তার প্রত্যয়ের কোনো ব্যত্যয় ঘটাননি। শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সেই পোশাকেই ছিলেন।
সাংবাদিক শরীফুজ্জামান পিন্টু বলেন, আবুল মকসুদ সাদা থান কাপড় পরতে শুরু করেছিলেন ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদ হিসেবে। কিন্তু গত ১৮ বছরেও তিনি সেই প্রতিবাদ থেকে সরে আসেননি। ইরাকও আজ পর্যন্ত মার্কিন সেনামুক্ত হয়নি।
তিনি বলেন, প্রথমে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ শুরু হলেও পরে পৃথিবীব্যাপী চলা বিভিন্ন আগ্রাসন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবেও তিনি এই পোশাক পরতে থাকেন।
তবে ২০১৬ সালে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক দৈনিক প্রথম আলোতে ‘লুঙ্গি’ শিরোনামে একটি নিবন্ধে লেখেন: ‘ইরাকে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশের অগ্রগণ্য সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ সেলাই করা কাপড় বর্জন করেন। এটা এই অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্য—বিদেশিরা এই অঞ্চলে আসার আগে আমরা সেলাইবিহীন কাপড় পরতাম। ধুতি আর শাড়ি। ব্লাউজ ছিল না। লুঙ্গিতেও সেলাই ছিল না। ঠাকুরবাড়ি শাড়ির সঙ্গে পরার জন্য ব্লাউজ, পেটিকোট ইত্যাদির প্রচলন করে। ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে, এই মিথ্যা অজুহাতে মার্কিনিরা হামলা চালায় এবং পুরো পৃথিবীকে অশান্ত করে তোলে, সৃষ্টি করে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও কোটি মানুষের বেদনার কারণ। তারই প্রতিবাদে সৈয়দ আবুল মকসুদ দুই খণ্ড সেলাই-ছাড়া সাদা চাদর পরা শুরু করেন। তিনি এখনও সেই ব্রত পালন করে চলেছেন।’
সূত্র: নিউজবাংলা