রমজানের শেষ ১০ দিন নবীজি (সা.) যেসব ইবাদত করতেন
- মুহাম্মদ বিন ওয়াহিদ
সন্দেহ নেই রমজান একজন মোমিন বান্দার জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। এ মাসের প্রতিটি দিন ও প্রতিটি ক্ষণ অনেক দামি ও মূল্যবান।
বিশেষত রমজানের তৃতীয় ভাগ বা শেষ দশকের তাৎপর্য অপরিসীম। নবীজি (সা.) এবং তার সাহাবীরা এই সময়কে খুব গুরুত্ব দিতেন। রমজানের অন্যান্য দিনে যেই আমলগুলো করতেন, শেষ দশকে এসে তার পরিমাণ অনেক বেড়ে যেত।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশকে নবীজি (সা.) ইবাদতের জন্য লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে ফেলতেন। অর্থাৎ ইবাদতের জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারা রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করতেন এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
রমজানের শেষ দশক এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার মূল কারণ হল, লাইলাতুল কদর বা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাতের কারণে।
লাইতুল কদর কী?
লাইলাতুল কদর (আরবি: لیلة القدر) এর অর্থ হল, অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো- ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি (কুরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তোমাকে কীসে জানাবে লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। শান্তিময় সে রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত। (সূরা কদর: ১-৫)
মুসলিম বিশ্বাস অনুসারে কদরের রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয় এবং এ রাতে কোনো আমল করলে তার সওয়াব অনেক অনেক গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। তাই এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য রমজানের অন্যান্য দিনগুলো থেকে একটু ব্যতিক্রম। অনেক বেশি।
কিন্তু হাদিস শরীফে কদরের রাত ঠিক কোনটি, তা নির্ধারণ করে বলা হয়নি। রমজানের শেষ দশকে তা খুঁজতে বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর খোঁজ করো”। (বুখারী শরীফ: ২০২০)
অন্য বর্ণনায় আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বে-জোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল-কদর তালাশ করো”। (বুখারী শরীফ: ২০১৭)
একারণেই রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার বিধান দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কদরের রাত পাওয়াটা নিশ্চিত হয়।
ইতিকাফ কাকে বলে?
ইতিকাফ হলো সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। এর পারিভাষিক সংজ্ঞায় বলা হয়, আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় মসজিদে অবস্থান করা।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করতেন। যতদিন না আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেছেন ততদিন তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছিলেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রী-গণ ইতিকাফ করেছেন। (বোখারি)
ইতিকাফের ফজিলত
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেছেন, ইতিকাফকারী যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত থাকেন এবং তার জন্য ওই পরিমাণ নেকি লেখা হয়, যে পরিমাণ আমলকারীর জন্য লেখা হয়ে থাকে। (মিশকাত, হাদিস নং: ২০০৪)
আল্লামা শারানি (রহ.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ১০ দিন ইতিকাফ করবে, সে দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব পাবে। (কাশফুল গুম্মাহ)
এছাড়াও রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দান-সদকা করা উচিত।
যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তাদের তা আদায় করে দেয়া চাই এবং যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা উচিত। নবীজি (সা.) রমজানে অধিক পরিমাণে দান করতেন।
আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানে নবীজি (সা.)-এর দান সদকা করার ব্যাপারে উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক বেড়ে যেত। তিনি রমজান মাসকে শাহরুল মুয়াসাত তথা সহানুভূতির মাস বলে ঘোষণা করেছেন। তাই আমাদের গ্রাম বা আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা অভাবগ্রস্থ আছেন, নববি শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। ইনশাআল্লাহ, করোনা পরিস্থিতির কারণে সওয়াব আরো বেশি হবে।
এছাড়াও কুরআন তিলাওয়াত, অধিক পরিমাণে জিকির, বেশি বেশি নফল নামাজ এবং কাকুতি মিনতি করে দুআ করার মাধ্যমে আমরা রমজানের বাকি দিনগুলো যাপন করতে পারি।
লেখক: তরুণ আলেম ও সংবাদকর্মী
সূত্র: যুগান্তর