কাজের যোগ্য মর্যাদা পাচ্ছেনা নারী
- আহমাদ উল্লাহ মাহফুজ
একবিংশ শতাব্দীতে এসে ও নারী আইয়ামে জাহিলিয়াতের মতোই নির্যাতনের শিকার, ভ্রুণ হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, ইভটিজিং, যৌতুক প্রথা, সর্ম্পক ছেদ, শারিরিক নির্যাতন, হত্যাসহ বিভিন্ন বৈষাম্যের শিকার হচ্ছে নারী, এমন কি পণ্য হিসাবে ও ব্যবহার হচ্ছে তারা ।
ভাইয়া, ভাইয়া সুখবর তোমার তো মেয়ে হয়েছে! এবার ও মেয়ে এই বউ নিয়ে আমি আর সংসার করবো না। এরপর কি হয়েছে তা হয়তো বলতে হবে না।নবজাতক সন্তানের মায়ের বুকফাটা আতর্নাদ,বাবার বাড়িতে আর্শিবাদ না হয়ে অভিশপ্ত। সম্মানের পরিবর্তে অবহেলিত, আহারে বা অনাহরে দিনাপাত। এটা সিনেমার গল্প মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তব।
গভির রাতে ঘুম ভেঙ্গে মা বললো পানি, সন্তান ঘরে পানি না পেয়ে সেই গভীর রাতে সুউচ্চ পাহাড় মাড়িয়ে পানি নিয়ে আসলেন। সন্তান পানি নিয়ে আসতে আসতে মা ঘুমিয়ে পরলো। সন্তান চিন্তিত যদি ডাকি ঘুম ভাঙ্গি কত না কষ্ট পাবে মা মণি। আবার পানি রেখে চলে গেলে, ঘুম ভেঙ্গে পানি না পেলে বড্ড কষ্ট পাবে মা মণি। এই ভেবে সারা রাত পানি নিয়ে থাকলেন দাড়িয়ে, এটা বাংলাদেশের বাইজীদ বোস্তামী। আবার স্ত্রীর জন্য গড়েছেন তাজ মহল।নারীর জন্য গড়া এরকম অসংখ্য কৃতি আছে দুনিয়া জুড়ে।
আবার এর বিপরিত দিক ও আছে, যেখানে সন্তানের হাতেই র্নিমমভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে মা, বেশি দূরের কথা নয়, ঐশীর ঘটনা অনেক আগের নয়। যে নিশার টাকা না দেওয়ায় হত্যা করলো মা-বাবাকে। এটা হয়তো জানতে পেরেছে খুব আলোচিত বলে। কিন্তু এমন মা আছে যারা জীবিত থেকেও অনেক বেশি কষ্টে আছে এই পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের অত্যাচারের কারণে। এই র্নিমমতার প্রখরতাও দেখা গেছে। আরো বেশি দেখা হয়েছে করোনা নামক মহামারিতে।
যাই হোক আমরা কি চিন্তা করেছি, কেন নারী আজ পণ্যের মতো ব্যবহার হচ্ছে, কেন নারীর দেন মহরের টাকার আলোচনা না করে যৌতুকের আলোচনা, কেন মেয়ে সন্তান বলে ভ্রুন হত্যা?
সন্তানাদি লালন পালন, পরিবার পরিচালনাসহ পরিবারের সকল কাজ পরিচালনার মাধ্যমে যে নারী সকলের মধ্যমণি, হবার কাথা সেখানে সমাজে তারা অহেলিত।
মা যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নির্স্বাথ ভাবে, ঘরে বা বাইরে, যদি একজন কমর্চারী রেখে করা হতো তাহলে তাকে কত টাকা দিতে হতো? একজন মানুষ ঘরের কাজ করে বাইরের কাজ ও করে তবে তার সাথে কেন অবিচার?
পরিবারের রানী খ্যাত,নারী ক্ষেত্র ভেদে মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, স্ত্রীসহ বিভিন্ন সর্ম্পকে জড়িত। এই সর্ম্পকের সাথে মিশে আছে পরম শ্রদ্ধা ভালোবাসা, যার মাঝে ছিল না কোন স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দ্যেশ্য বা স্বার্থের সর্ম্পক। যদি উধাহরণ দিয়ে বলি সন্তানের কাছে, ”মা” পৃথিবীর সব থেকে মধুর শব্দ, কারণ হলো একটি সন্তান ভূমিষ্ট হবার আগে থেকে একজন মা যে অসহনীয় কষ্ট সহ্য করেন তা অনুভব করার ক্ষমতা কোন পুরুষের কোন দিনই হবে না। দুনিয়ার মুখ দেখা থেকে সন্তানের প্রয়োজনে না বলতে পারা কথা গুলো মা হৃদয়ের গভির ভালোবাসা থেকে অনুধাবন করে, বাচ্চার সকল কাজ সম্পাদন করেন, বাচ্চার চরম দুঃখের সময়ে,অসহায়ত্বের সময়ে মা তার সকল সমস্যার সমাধান করেন।আসলে মায়ের মাতৃত্বের স্বাদ সন্তান জন্মদানে এবং তাদের লালন পালন করে সু-মানুষ হিসাবে গড়ে তোলাতে। একজন নারী জানে সন্তান জন্মদানে কি যে দুর্বিষহ কষ্ট। তার পরেও সন্তানের জন্য তার কত ই না আকাঙ্খা। তাই তো মা তার সকল সুখ বিসর্জন দেয় সন্তানের জন্য। যার কারণে সন্তানের কাছে সব থেকে আপন হয়ে যায় মা। সন্তানের জন্য এতো কষ্ট করা, ত্যাগ করা একজন পুরুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভবই বটে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী জাতিকে অকেজো হিসাবে গন্য করে, সমাজে তাদের অবদানকে যেভাবে অস্বীকার করা হয়, সে ব্যাপারে যুগ যুগ ধরে সচেতনতার জন্য কাজ করেছেন বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামালসহ বহু নারী ক্ষণজন্মা এবং অনেক অরাজনৈতিক সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। যা নারী অধিকারের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভুমিকা রাখছে। ফলশ্রুতিতে আজকের সময়ে এসে সারা বিশ্বে নারী জাগরণ হয়েছে এবং হচ্ছে।
নারী জাগরণের এক উজ্বল উধাহরণ বাংলাদেশ। যে দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী। তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক বেশি অবদান রেখেছেন তা অবিশ্বরণীয় বিশ্বের কাছে। বাংলাদেশের সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন,তিনিও নারী। এভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে নারীরা কাজ করে যাচ্ছে। এবং তারা তাদের যোগ্যতার নজির রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারগুলোও নারীদের অধিকারের ব্যাপারে অনেক সচেতনতার দৃষ্টি স্থাপন করেছে। এতো কিছুর পরেও সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা নারীদের যোগ্য অধিকার দিতে কুন্ঠাবোধ করে। এবং নারীদের সমাজে বোঝা মনে করে। তারা ও যদি নারীদের প্রতি সদয় হয়,তাহলে নারীরা আরো সহজতর ভাবে কাজ করে নিজেরা সাবলম্বী হয়ে সমাজের উন্নয়নে আরো গুরুত্বর্পূণ অবদান রাখতে পারবে।