হারিয়ে যাচ্ছে ধামরাইয়ের মৃৎশিল্প
- আবু রিফাত জাহান
নিধন পাল, হাতের জাদুতে নিমিষে বানাচ্ছেন মাটির তৈরি ফুলের টব, হাড়ি, পাতিল সহ বিভিন্ন তৈজসপত্র। তবে, তার এই হাতের জাদু কিংবা বাংলার মৃৎশিল্প যে এখন বাজারের প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাচ্ছে তা এখন অকপটেই বলা যায়। ঢাকার ধামরাইয়ের পালপাড়ার এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে পড়েছে এই শিল্পটি। তারপরও পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছে নিধন পালের মতো অনেকেই, তবে পরবর্তী প্রজন্মকে তো জেনে শুনে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াতে দেয়া যায় না তাই এই পেশা থেকে ইতিও টানছেন অনেকে।
ঢাকা জেলার বংশী নদীর তীরবর্তী দাঁড়িয়ে থাকা ধামরাই উপজেলার পালপাড়া যেন বাংলা সংস্কৃতিকে শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি স্বর্ণালী ছবি। এই এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ৪৮ পরিবারের মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্পসামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
প্রাচীন কাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থ সামাজিক কারণে মৃৎশিল্পে শ্রেণিভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তাই ধামরাইতেও এই পাল গোষ্ঠী অসংখ্য সীমাবদ্ধতার মাঝেও নিজেদের টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করে চলছে।
বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিস পত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের বস্তু। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। আর ক্রেতা ভাবছেন দামের আকাশ পাতাল সম্পর্কের কথা। শুধুমাত্র সৌখিনতার বশেই হয়তো কিছু ক্রেতা এখনো মেলে মৃতশিল্পীদের ধারে কাছে।
মাটির শিল্পের সময় এখন এতোটাই কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে যে উপজেলার অজপাড়াগাঁয়ে পর্যন্ত এখন আর মাটির হাড়ি-পাতিল তেমনটা চোখে পড়ে না। তবে অনুকূল বাজার পরিস্থিতি এর উলটো চিত্রও তৈরি করে দিতে পারে। তাই এই শিল্পকে যুগোপযোগী ও বাজারে টিকিয়ে রাখতে সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সহযোগীতার কার্যক্রমও ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে বলে ধামরাই উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়।
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবন যাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও ধামরাইয়ের মৃৎশিল্পীরা এখনও স্বপ্ন দেখেন। কোন একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।