স্বপ্ন যাদের বিসিএস
- বিপ্লব শেখ
ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে, “A good plan is half-done” অর্থাৎ ভালো পরিকল্পনা অর্জনের পথকে অর্ধেকটা এগিয়ে দেয়। আর বিসিএসকে যদি অর্জন করতে হয় তবে সেই পরিকল্পনার গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। কিন্তু পরিকল্পনা তো অনেক দূরের কথা, আমরা না বুঝেই অনেক সময় স্বপ্ন দেখি আর ক্যারিয়ার নির্বাচন করি। এ জন্য সফলতা আমাদের থেকে দূরে অবস্থান করে আর বার বার ব্যর্থ হয়ে হতাশ হই।
স্কুল জীবন থেকেই আমরা অনেকেই বুঝে না বুঝেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু বিসিএস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকার জন্য সে স্বপ্ন আঁধারেই মিলিয়ে যায়। আবার অনেকে এর প্রস্তুতি শুরু করেও কূলল-কিনারা না পেয়ে ছেড়ে দেয়। তাই বিসিএস ক্যাডার হতে হলে স্বপ্নকে লক্ষ্যে পরিণত করতে হবে। জানতে হবে বিসিএস কী, কেন ও কীভাবে?
বিসিএস কী?
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সংক্ষিপ্ত রূপ বিসিএস। আর সহজ কথায় বিসিএস একটি পরীক্ষার নাম। যে পরীক্ষায় পাশ করে সরকারি প্রথম শ্রেণীর চাকরি পাওয়া যায়। আর এই চাকরি সিভিল সার্ভিস অর্থাৎ প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, ট্যাক্স , অডিট, শিক্ষা ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। এই বিসিএস ক্যাডার মূলত দুই ধরনের। জেনারেল ক্যাডার (পুলিশ, প্রশাসন, পররাষ্ট্র ইত্যাদি) এবং টেকনিক্যাল ক্যাডার (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ইত্যাদি)। জেনারেল ক্যাডারে স্নাতক/ ডিগ্রি পাশ করা যেকোনো বিষয়ের শিক্ষার্থী আসতে পারে। কিন্তু টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হয়।
বিসিএস কীভাবে?
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বিসিএস পরীক্ষা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়- প্রাথমিক পরীক্ষা (প্রিলিমিনারি)। যেটা এমসিকিউ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। তারপর লিখিত পরীক্ষা হয়। আর সব শেষে মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ) হয়। প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষার জন্য যোগ্যতা অর্জন ও দ্বিতীয় ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ মৌখিক পরীক্ষার জন্য যোগ্যতা অর্জন এবং সবশেষ মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া সম্ভব। আর এই পরীক্ষাটি হয় মোট ১৩০০ নম্বরের। প্রথম ধাপ অর্থাৎ প্রিলিমিনারি হয় ২০০ নম্বরের ও দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষা হয় ৯০০ নম্বরের এবং শেষে মৌখিক পরীক্ষা হয় ২০০ নম্বরের। আর এই পরীক্ষার প্রথম ধাপ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল আসতে লাগতে পারে কয়েক বছর সময়। যদিও এই পরীক্ষার সিলেবাস নির্দিষ্ট কিন্তু এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয়, পুরো বিশ্বে এমন কঠিন পরীক্ষা খুব বেশি নেই। তাই বিসিএসের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে একজন পরিক্ষার্থীর দৈনিক ১০-১৪ ঘন্টা পড়তেই হয়। আর শুধু পড়লেই হবে সেটা নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনার সাথে যথার্থ পথে এগোতে হয়। তবেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।
বিসিএস কেন?
প্রত্যেক মানুষেরই সহজাত কিছু চাহিদা থাকে। কেউ ক্ষমতার পাগল, কেউ সম্মানের, কেউ উন্নত জীবনযাপনের। আর বিসিএস আপনাকে এনে দিতে পারে এ সবকিছুই। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৬ ধরনের ক্যাডার রয়েছে। এরা অন্য যেকোনো চাকরির তুলোনায় বেশ সম্মানের, সামাজিক মর্যাদাপূর্ণ ও ক্ষমতাবান। এখানে চারকরির নিরাপত্তাও অনেক বেশি। বিশেষ কিছু কারণ ছাড়া চাকরিচূত্য হওয়ার ভয় নেই। আবার চাকরি শেষে বিশাল পেনশন তো আছেই। বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণীর চাকরি পেতে বিসিএসের কোনো বিকল্প নেই ।
একটি সঠিক পরিকল্পনা ও ভালো প্রস্তুতি আপনাকে পৌছে দিবে আপনার স্বপ্নের ঘরে। আর যথার্থ পরিকল্পনায় ও কঠোর পরিশ্রম দ্বারা প্রথমবারেই ক্যাডার হওয়া সম্ভব। তাই প্রস্তুতি হোক সঠিক পরিকল্পনার সাথে যথাযত প্রক্রিয়ায়।