ভালো থাকুক আমাদের বটবৃক্ষ প্রিয় বাবা
- নাইম হাসান ( রিদয় )
সারা বিশ্বজুড়ে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস উদযাপিত হয়। সে হিসেবে আজ রবিবার ১৯ জুন বিশ্ব বাবা দিবস।
আমাদের বাবা
অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তারের হাত থেকেটাওয়ালে মোড়ানো বাচ্চাকে বুঝে নিয়ে, বুকেজড়িয়ে ধরে শুরু হয় এই বাবা হওয়ার পথ। এরপররাতে উঠে ন্যাপি বদল, অফিস থেকে ঘনঘন ফোনে বাবুটার হামি দেয়া, কাত হওয়া, চোখ পিটপিট করার খবর নেয়ার মাধ্যমে একজন পুরুষ পরিপূর্ণ বাবা হয়ে উঠেন। বাবার আঙুলে জড়িয়েই স্কুলে পা ফেলা, ঘরের বাইরে প্রথম পৃথিবী দেখা।
বাবার ভূমিকা
পরিবারের প্রধানের ভূমিকায় বাবার অবদান অনস্বীকার্য। যার হাত ধরে বাড়ির বাইরে প্রথম বের হওয়া তিনিই আমাদের বাবা। বাবার কাছে সন্তানের সব আবদার ও চাওয়া জমা হয়। দিন শেষে বাবা তার কর্মস্থল থেকে ফিরলেই সন্তান গলা ধরে আদর-সোহাগ পেতে চায়। বাবাও শত দুঃখ ও বেদনা ভুলে সন্তানকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে আদর করেন। যার মন সর্বদা বিষণ্ন থাকে পরিবারের খরচ যোগান দেয়ার জন্য। যিনি সন্তানের নতুন জামা-কাপড় কেনা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও লেখাপড়া নিয়ে বেশি চিন্তিত তিনিই আমাদের বাবা। তাই আজকের দিনে পৃথিবীর সকল বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
বাবার হাসি
বাবা হাসেন। সমস্ত শব্দের মধ্যে বাবার হাসির নৈঃশব্দ আমরা শুনতে পাই। বাবার শিশুর মতো হাসি দিগন্তের সঙ্গে মিশে পুরো আকাশটা ছড়িয়ে পড়ে। অচেনা গাছ, অজানা পাখি কিংবা অপরিচিত মানুষের মাঝে নিজেকে আর আগন্তুক মনে হয় না।
আত্মার ভালোবাসা
মায়ের গুরুত্ব বেশি হলেও একটি পরিবারে বাবার গুরুত্বও কোন অংশে কম নয়। বাবা শব্দটি উচ্চারিত হলেই আবদার পূরণ বা সন্তানকে কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর মতন বিষয়াদি চলে আসে। চট-জলদি সমাধানে বাবার সাথে পরিবারের অন্য কারও তুলনা করা যায় না। পিতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক গড়ে উঠে ভয় আর আদরের মাধ্যমে। কোন অপরাধ করলে শাস্তি দেয়া আবার কিছুক্ষণ পরেই গায়ে হাত রেখে আদর করার মাধ্যমেই পরিবারে সন্তান ও পিতার মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন গড়ে উঠে। বাবার কঠোর শাসন অনেকের জীবনের গতিকে পরিবর্তন করে আলোর পথে এনেছে।
কর্মব্যস্ততা ও পরিবারের চিন্তায় বাবা দিনের অধিকাংশ সময়ই বাইরে থাকেন। আবার অনেক বাবা চাকরির সুবাদে পরিবার থেকে অনেক দূরে থাকেন দেশে কিংবা বিদেশে। বাবার দেহ বাইরে থাকলেও মন ছুটে যায় পরিবারে। সন্তানের কচি মুখ তাঁর চোখের সামনে ভেসে আসে। বাবা যখন বাড়ি ফিরেন তখন সন্তানের মুখ দেখে সকল দুঃখ ভুলে যান। বাবা বাড়ি ফেরার পথে চকলেট ও মিষ্টি নিতে ভুলেন না। বাড়ি ফিরবেন বলে অনেক সন্তান শুধু বাবার পথ চেয়ে থাকেন। এটা কেবল বাবার প্রতি শুধু আত্মার সম্পর্কের জন্যই নয় বরং আবেগ ও ভালোবাসার জন্য। বাড়ি ফিরেই বাবার ব্যাগ হাতড়িয়ে সন্তানের কাছে চকলেট কিংবা মিষ্টি বের করা এক আনন্দর বিষয়।
যোদ্ধা বাবা
পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে বা যেকোন সমস্যায় বাবা সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মধ্যে কোন ক্লান্তি বা অবসাদ দেখা যায় না। বাবার কাছে কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না করেন না। অর্থাভাবে বাবার কোন কিছু দেয়ার সামর্থ্য না থাকলেও তিনি ভবিষ্যতে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। বড় কিছু চাওয়ার বায়না কেবল বাবার কাছেই শোভা পায়। খেলনা বা সাইকেল শিশুদের অনেক প্রিয়। বাবার কাছে চাইলে সহজেই তা পাওয়া যায়। পরিবারে বাবার অসীম স্নেহ ও ভালোবাসায় সন্তান বেড়ে উঠে। তাঁর ধৈর্য্য ও পরিশ্রম দেখে মনে হয় তিনি এক জড় পদার্থ। সন্তানের কাছ থেকে কষ্ট পেলেও তিনি রাগ কিংবা অভিমান করেন না। আসলে সৃষ্টিকর্তা বাবা বলেই মনে হয় তাঁর মনকে এভাবে গঠন করেছেন।
বাবা বটবৃক্ষ
সন্তান যখন উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণে, কাজে কিংবা চাকরির সুবাদে বাড়ির বাইরে যায় তখন বাবার মন বাধা দেয়। তারপরও বৃহৎ স্বার্থে মেনে নিতে বাধ্য হন। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগানে অনেক বাবা খুব কষ্ট করেন। সন্তান টাকা চাইলে কখনো বাবার মুখে না শোনা যায় না। প্রতিউত্তরে কোনো বাবা বলেন না যে এতো খরচ করো কেন? যার হাড়ভাঙা পরিশ্রম থেকে সন্তানের লেখাপড়া হয় সে বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা জমা হবে অবশ্যই। নতুন চাকরি বা কাজ পেলে সন্তানের কাছে বাবার অর্থ প্রাপ্তির চিন্তা থাকে না। ভালো কিছু করলে গর্বে বাবার বুক ভরে যায়। নতুন পরিবেশে কীভাবে চলতে হবে, কীভাবে কথা বলতে হবে সব কিছুই বাবার কাছ থেকে জানা যায়। তিনি যেন সন্তানের জন্য এক বটবৃক্ষ।
বাবার প্রত্যাশা
সন্তানের বাড়ি ফেরার কথা শুনলেই বাবা সকালে খাবার না খেয়েই অপেক্ষায় থাকেন। বাড়ির বাইরে বের হয়ে সন্তানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। সন্তানের জন্য দুপুরে কী রান্না হবে তা বাবা ঠিক করে দেন। সন্তান তাঁর জন্য কী এনেছেন সে অপেক্ষায় না থেকে বাবা মুখের দিকে তাকিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। সন্তানের দিকে মুখ তুলে তাকালে তিনি যেন আপন পৃথিবী খুঁজে পান। তাঁর জন্য অল্প দামের কিছু আনলেও কোটি টাকার জিনিসের মতো বার বার বের করেন আর দেখেন। বাবার কাছে সন্তানের চেয়ে দামী পৃথিবীতে কিছুই নেই। তাইতো সন্তান হারালে অনেক বাবাকেই পাগল হতে দেখা যায়।
পরিবারে যার সহায়তায় বড় হলাম সে বাবারা অনেকেই আজ ভালো নাই। অবসর গ্রহণ করে কেউ জটিল রোগে ভুগছেন, কেউ সন্তানের আচরণে ব্যথিত আবার কেউ প্রিয়জন হারিয়ে পাগলপ্রায়। তবে অনেক বাবা এখনও ভালো থেকে সন্তানদের নিয়ে সুখ ভোগ করছেন। বাবার জন্য সন্তানের অনেক কিছু করার আছে। কিন্তু বাবারা তেমন কিছু চান না। শুধু চান তাঁর সাথে ভালো ব্যবহার। নাতি-নাতনি নিয়ে শুধু খেলে আনন্দ পেতে চান আমাদের বাবারা। অধিকাংশ বাবা জানেন না তাঁদের ভবিষ্যৎ। যিনি সন্তানকে কোলে-পিঠে মানুষ করলেন সে বাবা অবশ্যই ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করেন।
শেষ বাণী
সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের যে ভালোবাসা, তা পৃথিবীর একমাত্র নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সন্তানের জন্য বাবা-মা নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। কিন্তু তিক্ত সত্য হলো, কালপরিক্রমায় আমরা হয়ে উঠি অতি নির্মম। প্রকাশ পায় বাবা-মায়ের প্রতি চরম অবহেলা ও অবজ্ঞা। তাই সকলের প্রতি আমার অনুরোধ বাবাকে শুধু বাবা দিবসে সীমিত না রেখে সবসময় বাবা-মাকে আন্তরিক ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা দিয়ে ভরে রাখি।
আজ পৃথিবীর সকল বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বাবার প্রতি আমাদের সম্পর্ক আরো গাঢ় হোক। বাবার সাথে প্রতিদিনই যেন ভালোভাবে কাটে। তাঁদের মতামত যেন পরিবারে প্রাধান্য দিতে পারি। তাঁদের জন্য নিরাপদ হোক পরিবার ও দেশ। পরিবারে সবচেয়ে ভালোটা যেন হয় বাবার জন্য। সুখে-দুঃখে সর্বদা বাবার প্রতি আমাদের আচরণ যেন কোমল হয়। তাদের সুস্থতার জন্য সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হবে সর্বদা খোঁজ রাখা। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা আরো দৃঢ় হোক এবং এভাবে পৃথিবীতে বিরাজ করুক অনাবিল শান্তি।
প্রতিবেদক : শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি