হযরত শাহ জালাল (রঃ) এর বিনা যুদ্ধে সিলেট জয়
- আহমাদ উল্লাহ মাহফুজ
সিলেটের নাম তখন শ্রীহট্ট। সেসময় এই শ্রীহট্টের রাজা ছিলেন গৌড় গোবিন্দ। গৌড় গোবিন্ধ ছিলেন কট্টর ও অত্যাচারী শাসক। বাংলার অনেক জায়গাতে ইসলামের প্রসার হলেও গৌড় গোবিন্দের কারনে সিলেট অঞ্চলে তখনো অতি অল্প কিছু নাগরিক ছিল মুসলিম। এরমধ্যে ছিলেন শেখ বুরহান উদ্দিন নামে একজন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। কিন্তু তার কোন সন্তান হচ্ছিল না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন একটা সন্তানের জন্য। মানত করেছিলেন সন্তান হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে গরু জবাই দিয়ে প্রতিবেশীদের খাওয়াবেন। একসময় তাঁর প্রার্থনা কবুল হল।
বুরহান উদ্দিনের ঘরে আলোকিত করে জন্ম নিল এক পুত্র সন্তান। ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী তিনি সন্তানের আকিকা করা মনস্থির করেন।এবং অনেক আকাঙ্খার সন্তান হওয়ায় তিনি মানত ও করেছিলেন যে সন্তানের জন্য গরু দিয়ে আকিকা করবেন। মানত অনুযায়ী এবার গরু কুরবানি দেয়ার পালা। কিন্তু কট্টর রাজা গৌড় গোবিন্দের এলাকায় গরু জবাই করা নিষিদ্ধ। তবুও আল্লাহর কাছে মানত করেছেন (অন্যমতে আকিকা উপলক্ষে গরু জবাই দিয়েছিলেন), দীর্ঘ আকাঙ্খিত সন্তান পেয়েছেন তাই গোপনে গরু কুরবানি দিয়েই ফেললো বুরহান উদ্দিন।
কিন্তু সেটা গোপন থাকলো না। এই কথা চলে গেল গৌড় গোবিন্দের কানে। কথিত আছে কোন এক কাকের মুখ থেকে এক টুকরো মাংস গৌড় গোবিন্দের রাজ প্রাসাদে পড়ে যায়। এবং এখান থেকেই গরু জবাই হওয়ার কথা প্রকাশ পায়।
গৌড় গোবিন্দ তল্লাশি করে বের করলেন গরু জবাই করা ব্যক্তিকে। গ্রেফতার করলেন বুরহান উদ্দিনকে। গরু জবাই নিষিদ্ধ থাকার পরেও কোন সাহসে সে একাজ করলো জানতে চাইলে বুরহান উদ্দিন জানালো তার সন্তান ও মানত বিষয়ক (বা আকিকা) কথা জানালেন। সন্তানের জন্য গরু জবাই করা হয়েছে শুনে নিষ্ঠুর রাজা গৌড় গোবিন্দ বুরহান উদ্দিনের শিশু সন্তানকে এনে বাবার সামনেই কলিজার টুকরো সন্তানকে হত্যা করলো গোর গেবিন্দ।এবং যে হাত দিয়ে বুরহান উদ্দিন গরু জবাই করেছেন সে হাতও ক্ষুদ্ধ রাজা কেটে দেয়।
শোকার্ত ও ক্ষুব্ধ বুরহান উদ্দিন গেলেন বাংলার তৎকালীন শাসক শামস উদ্দীন ফিরোজ শাহের নিকট। জানালেন এই নিষ্ঠুরতার কথা এবং শোনালেন গৌড় গোবিন্ধের অত্যাচার, নির্যাতনের কথা। ফিরোজ শাহ সব শুনে তাঁর ভাগ্নে সিকান্দর গাজীর নেতৃত্বে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন গৌড় গোবিন্দকে পরাজিত করে সিলেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে। কিন্তু তারা র্ব্যথ হয়ে ফিরে গেলে বুরহান উদ্দিন ভারাক্রান্ত হয়ে পরে ।সন্তান হত্যার বিচারের আশায় ব্যাকুল বুরহান উদ্দিন ছুটা ছুটি করেন।
এক পর্যায় তিনি বুক ভরা মনঃকষ্ট নিয়ে বুরহান উদ্দিন চলে গেলেন দিল্লী।দিল্লীতে আলাউদ্দিন খিলজি সেনা প্রতি নাসির উদ্দিন শাহকে পাঠালেন।ইতি মধ্যে বুরহান উদ্দিন চলেগেলেন নিজামুদ্দিনে সে সেখানে বুরহান উদ্দিনের সাক্ষাৎ হয় হযরত শাহ জালাল রঃ এর সাথে।তিনি হযরত শাহ জালাল রঃ এর কাছে সন্তানের র্নিমম হত্যা ও তার উপর নির্যাতনের কথা তুলেধরেন।বুরহান উদ্দিনের উপর যে অত্যাচারের কথা শুনে অন্তান্ত মর্মোহত হলেন এবং এ হত্যার সুষ্ঠ বিচার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি বাংলার দিকে যাত্রা শুরু করেন। নিজামুদ্দিন থেকে তাকে দুটি পায়রা উপহার দেন ”যা এখন হযরত শাহ জালাল রঃ এর মাজারে দেখা যায় এবং যে পায়রার নাম জালালী বলেই পরিচিত”।
হযরত শাহ জালাল (রঃ) বাংলার সিলেটের দিকে আগাতে থাকলেন, এমত অবস্থায় প্রতিমধ্যে সাক্ষাৎ হয়, এখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির প্রেরিত সেনা প্রধান নাসির উদ্দিন শাহের সাথে সাক্ষাৎ হয়।পরে তারা এক সাথে শ্রিহট্রের দিকে অগ্রসার হন। এবং অত্যাচারিত শাসক গৌর গোবিন্দের জুলুম শাহির পতনের জন্য জোর কদমে আগিয়ে যায়।
সেনা প্রতি নাসির উদ্দিন শাহ এবং হযরত শাহ জালাল রঃযখন আসছিলেন তখন গৌর গোবিন্দ তাদের ঠেকাতে র্ব্যথ হয়ে শেষ চেষ্টা হিসেবে রাজা গোবিন্দ এক বিশালাকার লৌহধনুক যাদুমন্ত্র দিয়ে শাহজালালের (রহঃ) কাছে পাঠায়; এবং শর্ত দেয় কেউ যদি একা উক্ত ধনুকের সাহায্যে তীর মারতে পারে তাহলে গোবিন্দ রাজ্য ছেড়ে চলে যাবে।যদিও এটা ছিল তার ছলনা।কিন্তু হযরত শাহ জালাল রঃ গোবিন্দের র্শত মেনে নেয়।
শাহজালাল (রহঃ) তাঁর দলের লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, যে ব্যক্তি কখনও ফজরের নামাজ কাজা করেনি বা বাদ দেয়নি একমাত্র সেই পারবে এই বিশাল লৌহ ধনুক দিয়ে একা তীর মারতে। পাওয়া গেল সেনা প্রতি সৈয়দ নাসির উদ্দীনকে। নাসির উদ্দিন শাহ সফল হলেন। রাজা গোবিন্দ গোপনে রাজ্যের পশ্চাদ পদ হয়ে পালালেন। ১৩০৩ সালে প্রায় বিনাযুদ্ধে সিলেট জয় করলেন হযরত শাহজালাল রঃ। কিছুক্ষণ পর সিলেটে প্রথমবারের মত ধ্বনিত হল আযানের সুর।
প্রতিবেদক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি