দাস প্রথার বিলুপ্তি নয়, শুধু চেহারা পর্রিবতন হয়েছে
- আহমাদুল্লাহ
পৃথিবীর সব যুগে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ সমাজের বিত্তশালীদের মাধ্যমে অত্যাচার, নির্যাতন, বাক স্বাধীনতা হরণ, অধিকার হরণসহ বিভিন্ন ভাবে নিগ্রহের স্বীকার হয়ে আসছে। বিত্তশালীরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দরিদ্রদের বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করে থাকে। তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হলো সমাজের দাস প্রথা।
দাস প্রথা এমন একটি প্রথা যার মাধ্যমে মনিব একজন মানুষের পুরো স্বত্তাটাকেই ক্রয় করে নেয়। যেমন ক্রয় করা হয় বিভিন্ন আসবাব পত্র। যার কারণে একজন সাধারণ মানুষের স্বকীয়তা বলতে আর কিছুই থাকে না।মনিব যেভাবে চাবে, দাসের সেভাবে চলতে হবে। সত্য বা মিথ্যা, ন্যায় না অন্যায়, ভালো না মন্দ ইত্যাদি বলার বা অধিকারের ব্যাপারে তার কোন মতামত পেশ করার এখতিয়ার থাকে না। বতর্মান সময়েও এটা অনেক বেশি হারে আছে,কিন্তু আগের মতো দেখতে নয়, এই প্রথার রুপ পর্রিবতিত হয়েছে।
লাইলী আক্তার (শিশু গৃহকর্মী ) নোয়াখালী লক্ষিপুর থেকে অভাবের তাড়নায় রাজধানী ঢাকায় আসে একটু ভালো থাকার আশায়। তাকে কাজের জন্য নিয়ে আসেন, বীর শ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মাদ পাবলিক কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা ফারজান আক্তার। যার হাতে শত শত শিশু পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হবে। দেশ জাতি এবং মানবতার জন্য কাজ করবে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে। সাধারণ মানুষের দুঃখ- দুর্দশা ঘুচাবে, এটাই সমাজের মানুষের প্রত্যাশা। এই সমাজ গড়ার কারিগরই গৃহকর্মীকে দীর্ঘ আট মাস ধরে তার বাবা মায়ের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ করতে দেন নাই। কথা কথায় গরম খুনতি দিয়ে দিত ছ্যাকা। যার শেষ হয় লাইলীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এভাবে কত লাইলী যে একটু সুখের আশায় এসে সুখের দেখা পাবার আগেই হারিয়ে যায় না ফেরার দেশে।
হেনা তার মায়ের বড় মেয়ে, (সমাজে এখনো মেয়ের তুলনায় ছেলেদের কদর বেশি) সাধারণত মায়ের কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হেনার পরিবার হেনাকে পেয়ে অত্যান্ত আনন্দিতই হয়েছিল। মনে হতে পারে হেনার পরিবার তাহলে অন্য পরিবারের মতো মেয়েদের অভিশাপ হিসাবে দেখে না, বরং সম্মানের চোখে দেখে। কিন্তু আসলে তা নয়। হেনার পরিবারের উদ্দেশ্য আরো মারাত্মক। তারা এই ভেবে খুশি যে মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসার মাধ্যমে তারা অনেক বেশি উপকৃত হবে। হেনার মা বাবার মতো আরো শত শত মা বাবা আছে যারা সন্তানদের সুখ শান্তির কথা না ভেবে, তাদের সাময়িক সমস্যা দূর করার জন্য মুক্ত স্বাধীন একজন মানুষকে ঠেলে দেয় তার স্বর্বস্ব হারানোর পথে। যে সকল মেয়েদের বিভিন্ন প্রলভন দেখিয়ে প্রলুব্দ করে বিভিন্ন কাজের কথা বলে নিয়ে আসে নারী পাচার কারীরা। তারপর তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পতিতালয় বা যৌন পল্লিতে। যেখানে একবার গেলে তার আর ওখান থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ থাকে না। তখন এই অসহায় নারী সমাজ থেকে ও বিচুত্য হয়ে পরে। একজন স্বাধীন মানুষ হয়ে সকলের সাথে বেঁচে থাকার যে সুখ, তা সে আর কখনো পায়না। আবার তার যদি সন্তান হয় তাহলে সে ও সমাজে মানু্ষের কাছে অবহেলিত হয়ে যায়। তার থাকেনা পড়াশুনা করে বড় হবার যথেষ্ঠ সুযোগ সুবিধা। এভাবে তাকে ও ধরতে হয় সমাজের নিম্ন মানের কাজে।আর এভাবেই সৃষ্টি হয় একটা অবহেলীত জাতির।
দরিদ্র দেশের মানুষ যারা উন্নত দেশগুলোতে যা তাদের ভাগ্য ফিরাতে। যেমন বাংলাদেশের অনেক মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে যায়, দেশ, পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন ছেড়ে।যে সকল দেশে যায় তারা এই সকল মানুষের সাথে যে অমানবিক ব্যবহার, (ঠিক মতো টাকা না দেওয়া, সময় মতো টাকা না দেওয়া, যে সকল সুযোগ দেওয়ার কথা তা ঠিক মতো না দেওয়া, ছুটির ব্যবস্থা না থাকা, কর্মীদের মারধর করা, বাসস্থানের সুব্যবস্থা না করা নারী কর্মীদের প্রতি যৌন নির্যাতন করা ইত্যাদি)তারা করে। তা কোন মানবিকতার পর্যায়ে পরেনা।
বাংলাদেশের মতো দেশেও মানুষ কাজের জন্য পন্যের মতো বাজারে উঠে। কর্মীরা বলতে থাকে যে স্যার আমি সকল কাজ পারি আমাকে নেন স্যার। এভাবে তারা দিনের জন্য না হয়, মাসের জন্য আবার কেউ বছরের জন্য বিত্তশালীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। এই বিত্তবানরা ও তাদেরকে পন্যের মতো যাচ্ছে তাই ব্যবহার করছে।
জোর যার মুল্লুক তার বলে একটা প্রবাদ আছে এ কথাটা চরম ভাবে সত্য। সমাজে মানবতার কথা বলা মোড়লরা যাচ্ছাতাই দরিদ্র মানুষদের ঠকাচ্ছে কিন্তু কারো কিছু করার নেই। আসলে আগেকার মতো এখনও সাধারণ মানুষ বিত্তশালীদের দ্বারা নিপীড়িত এবং নিঃষপেষিত। তবে বতর্মান সময়ের সমস্যাগুলো চেহারা পালটিয়ে ফেলেছে।
প্রতিবেদকঃ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।