বাংলার ক্রিকেটে বগুড়ার বাঘেরা

বাংলার ক্রিকেটে বগুড়ার বাঘেরা

  • ওমর ফারুক পিয়াস 

১৯৯৭ সাল থেকে ২০২১। মাঝখানে কেটে গেছে ২৪টি বছর। বাংলাদেশের ক্রিকেট গুটি গুটি পায়ে এগোতে এগোতে এখন বিশ্ব ক্রিকেটে শক্তিশালী এক দলের নাম। যদিও এখন বাংলাদেশের নামের পাশে নেই বড় কোনো ট্রফি। তবুও ক্রিকেট বিশ্বের সমীহ আদায় করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। হরহামেশাই হারিয়ে জয় তুলে নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তির বিরুদ্ধে। মাঠে নামার আগেই আর কেউ হারিয়ে দেয় না বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের মূল চালিকাশক্তি সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। যারা এখনও খেলে চলছে বেশ সুনামের সাথে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে একসময় দাপট ছিল সাতক্ষীরা ও রাজশাহীর ক্রিকেটারদের। তবে পিছিয়ে নেই বগুড়ার ক্রিকেটাররাও। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকের বাড়ি বগুড়ায়। এছাড়াও জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার শফিউল ইসলামও বগুড়ার ছেলে, যাদের শক্ত হাতে ভর করে এগিয়ে চলছে বাংলার ক্রিকেট। আর তাই আজ জানব বগুড়ার কৃতি ক্রিকেটারদের সম্পর্কে। 

মুশফিকুর রহিম

মুশফিকুর রহিমের জন্ম ৯ মে ১৯৮৭। ‘মুশি’ বা ‘মুশফিক’ নামে পরিচিত। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসেন ২০০৫ সালে, উইকেট কিপার হিসাবে। ধীরে ধীরে সব ফর্ম্যাটেই তার অভিষেক হতে থাকে। কিছুদিন পরেই ২৬ মে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার টেস্টে অভিষেক হয়। টেস্ট অভিষেকের প্রায় দেড় বছর পর ৬ আগস্ট ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার ওয়ানডে অভিষেক হয়। ওয়ানডে অভিষেকের আড়াই মাস পর ২৮ নভেম্বর ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তার। অভিষেকের পর থেকে দলের প্রয়োজনে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়ক ছিলেন। তাকে টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ও সবচেয়ে সফল অধিনায়ক বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের প্রাক্তন কোচ জেমি সিডন্সের মতে, মুশির ব্যাটিং এত বহুমুখী যে তিনি টপ অর্ডারের যেকোনো জায়গায় ব্যাট করতে পারেন, এক থেকে ছয় পর্যন্ত। 

মুশফিক

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরার তিনি। তিনি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান যিনি দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। তিনি প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। মুশফিকই একমাত্র বাংলাদেশী খেলোয়াড় যিনি ১৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতেছেন। টেস্টে ৩৭ গড়ে প্রায় ৪৬৯৬ রান করেন তিনি। টেস্টে ৭টি সেঞ্চুরি ও ২৩টি হাফ সেঞ্চুরি আছে তার। টেস্টে তার সর্বোচ্চ স্কোর ২১৯ রান। ওডিআইতে ৩৭ গড়ে প্রায় ৬৫৮১ রান করেন তিনি। ওডিআইতে ৮টি সেঞ্চুর ও ৪০টি হাফ সেঞ্চুর আছে তার। ওডিআইতে তার সর্বোচ্চ স্কোর ১৪৪ রান। টি২০ তে ২০ গড়ে প্রায় ১৩২১ রান করেন তিনি। টি২০ তে এখনো সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও ৫টি হাফ সেঞ্চুরি আছে তার। ওডিআইতে তার সর্বোচ্চ স্কোর ৭২ রান। টেস্টে ক্যাচ/স্টাম্পিং করেন ১০৪/১৫ টি। ওডিয়আইতে ক্যাচ/স্টাম্পিং করেন ১৮৮/৪৬ টি। টি২০ তে ক্যাচ/স্টাম্পিং করেন ৩৮/২৯ টি। তার জার্সি নাম্বার ১৫।

শফিউল ইসলাম

শফিউল

বগুড়ার আরেক কৃতি সন্তান হলেন শফিউল ইসলাম। তার পুরো নাম শফিউল ইসলাম সুহাস। তিনি জন্মগ্রহণ করেন অক্টোবর ১৯৮৯ সালে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি রাজশাহী বিভাগে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন।  তিনি রাজশাহী বিভাগে তার প্রথম দুই মৌসুমে কুড়ি থেকে দশের মাঝামাঝি একটি গড় বজায় রেখেছিলেন এবং এটি নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি একজন ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসেন ১৭ জানুয়ারি ২০১০ সালে। ধীরে ধীরে সব ফর্ম্যাটে তার অভিষেক হয়। এর কিছুদিন পরেই মে ২০১০ সালে ইন্ডিয়ার বিপক্ষে তার টেস্টে অভিষেক হয়। ৪ জানুয়ারি ২০১০ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে তার ওডিআই অভিষেক হয়। ওডিআইতে অভিষেকের কিছু দিন পরেই তার টি২০ তে ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয়। তিনি বাংলাদেশের অনেক জয়ের সাক্ষী। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার ব্যাটিং নৈপুণ্যে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় লাভ করে। টেস্টের ৯ ম্যাচে ৫৩.৪০ গড়ে ১৫ উইকেট নেন তিনি। আর ব্যাটিংয়ে ১২ গড়ে ১৮৫ রান করেন। টেস্টে তার একটা হাফ সেঞ্চুরিও আছে তার। টেস্টে সেরা বোলিং ৪/৬৭। ওডিআইতে ৫৯ ম্যাচে ৩৫.৫৫ গড়ে ৬৯ উইকেট নেন তিনি। ওডিআইতে সেরা বোলিং ৪/২১। টি ২০ তে ১১ ম্যাচে ৩৪.৩৭ গড়ে ৮ উইকেট নেন তিনি। ওডিআইতে সেরা বোলিং ২/১৯। নিয়মিত পারফর্ম না করার কারণে সুযোগ পান না এখন। 

তানজিদ হাসান

তানজিদ

তানজিদ হাসান তামিম, জন্ম ১ ডিসেম্বর ২০০০ সাল। একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে উত্তরা স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগে টুয়েন্টি-টুয়েন্টিতে অভিষেক হয় তার। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে উত্তরা স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ৮ মার্চ ২০১৯ তারিখে লিস্টে অভিষেক হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, তাকে ২০২০-এর অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আর সেই বিশ্বকাপে বাজিমাত করেন বাংলার এই ছোট তামিম। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোনো বড় ধরনের টুর্নামেন্ট জয় লাভ করে। আর সেই ট্রফিটা আসে বগুড়ার ছেলে তানজিদ হাসান তামিমের হাত ধরে। 

তৌহিদ হৃদয়

তৌহিদ

বগুড়ার আরেক কৃতি ক্রিকেটার হচ্ছেন তৌহিদ হৃদয়। তিনিও এই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের সদস্য। তৌহিদ হৃদয়ের জন্ম ৪ ডিসেম্বর ২০০০ সালে। জাতীয় ক্রিকেট লিগে রাজশাহী বিভাগের হয়ে ২০/১৮ মৌসুমে ১৩ অক্টোবর তারিখে তার প্রথম-শ্রেণীর অভিষেক হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে, ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য স্কোয়াডে তার নাম ছিল। আর তিনিও ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী সদস্য। ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে তার অভিষেক হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের খসড়া অনুসরণ করে ২০১৮ সালের অক্টোবরে, সিলেট সিক্সার্স দলের স্কোয়াডে তার নাম ঘোষণা করা হয়। ২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে তার টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, তাকে ২০২০-এর অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের জন্য তিনি বাংলাদেশ উদীয়মান দলে নির্বাচিত হন।

Sharing is caring!

Leave a Comment