ভাটির দেশে ক্রিকেট যেন এক স্বপ্নের জোয়ার
- দিবাকার চৌধুরী
ক্রিকেট! এই শব্দটি প্রতিটি বাঙালির রক্তে মিশে যাওয়া এক অনুভূতির নাম। ক্রিকেট এখন একটি আবেগ, বলতে পারেন জাতীয় আবেগও বটে। ক্রিকেট শুধু এখন একটা খেলা না; এটি কোটি বাঙালির ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে যাওয়ার মন্ত্র। ক্রিকেট এখন যেন কোটি বাঙালির স্বপ্ন দেখার মঞ্চ।
এক সময় তো ফুটবল নিয়ে রীতিমতো মাতামাতি ছিল কিন্তু ক্রিকেটর জোয়ার অনেক আগেই তাকে হারিয়ে দিয়েছে। টাইগারদের জয়ে দেশের মানুষ যেন সব ভুলে যায় পরিণত হয় ক্রিকেট পাগলে। এই স্বপ্নের বীজ যাদের দ্বারা বপন করা হয়েছিল সেই আকরাম নান্নু দুর্জয়দের হাত ধরে আইসিসি ট্রফি জয়ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে গিয়েছিল এক অনন্য উচ্চতায়, হাতে হাতে ছড়িয়ে দিয়েছিল লাল সবুজের বিজয় নিশান।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের যাত্রাটা ৩৫ বছরের কিছু বেশি। স্বাধীনতার চেয়ে অনেক কম বয়সী ক্রিকেট ১৯৮৬ সালে ৩১ শে মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করে, এরপর ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক। একসময় হামাগুড়ি দিয়ে চলা ক্রিকেট আজ সাকিব, মুশফিক-মাশরাফিদের নেতৃত্বে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখে। সেই ১৯৯০ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার ক্রিকেটে যে লাল সূর্য উদিত হয়েছিল তাকে আরও পরিপূর্ণতা দেয়, যখন আকবর শরিফুলদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপ জয় করে সদর্পে বলে ওঠে, “উই আর দা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন”।
তবে দেশের ক্রিকেট আজ এতদূর আসার পেছনে পথটি খুব একটা মসৃণ ছিল না। যে সমস্ত খেলোয়াড়দের কারণে বাংলাদেশ আজ এতদূর আসতে পেরেছে তারা পায়নি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। নামমাত্র বেতন নিয়ে দেশকে দিয়েছে প্রাণ উজাড় করে। তাদের এই ত্যাগের কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আজ বিশ্বমানের এক ক্রীড়া সংস্থা হয়ে উঠেছে পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইনকে সমৃদ্ধ করতে।
টেস্ট ক্রিকেটে টাইগারদের জয়ের পরিসংখ্যান মাত্র ১২.৫০ ভাগ। এ পর্যন্ত ১২৮ টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ১৬টি তে ড্র করেছে ১৭ টি তে হারতে হয়েছে ৯৫ টি ম্যাচে। ক্রিকেটের এই বনেদী ফরমেটে টাইগারদের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমার গল্পটা ব্যর্থতায় মোড়ানো হলেও রয়েছে বেশ কিছু অর্জন; এই যেমনটা ধরুন, মোহাম্মাদ আশরাফুলের সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে টেস্টে সেঞ্চুরি, যা কিনা আবার সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির রেকর্ড। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাট্রিক করার বিরল রেকর্ডটাও যে রয়েছে টাইগার অলরাউন্ডার সোহাগ গাজীর ঝুলিতে। অভিষেকের পরে টানা ১৩ টেস্ট অর্ধশতাধিক রানের ইনিংস খেলে আরেক কীর্তি গড়েছেন মমিনুল হক।
টেস্টের ন্যায় টি-টুয়েন্টিতেও ধুকতে থাকা বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে ভাল কিছুরই আভাস দিচ্ছে। তবে টেস্টের ও টি-টুয়েন্টির তুলনায় ওয়ানডেতে বেশ খানিকটা সফল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটের সফলতা ছিল গর্ব করার মত। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা, ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ কিংবা ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামানো এ যেন সূত্রে গাঁথা।
আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিং ও বাংলাদেশের উন্নতির গ্রাফটা চোখে পড়ার মতো। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ক্রিকেটাররা পাচ্ছে উচ্চ বেতন-ভাতা। তাইতো কোটি তরুণ-তরুণী এখন স্বপ্নে বুক বাধে সাকিব-তামিম হয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার।